সোনাবেশে ধরা দিলেন রথে! মাসির বাড়ি থেকে ফিরে প্রথা মেনে দিঘার মন্দিরের বাইরেই জগন্নাথদেব
প্রতিদিন | ০৭ জুলাই ২০২৫
রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: লক্ষ্মীদেবী দ্বার আটকে দাঁড়িয়ে। তাই প্রথা মেনে মাসির বাড়ি থেকে ফিরে তিনদিন দিঘার মন্দিরের বাইরে রথে কাটবে জগন্নাথদেবের। রবিবার বিকেলে সেই রথেই সোনাবেশে দর্শন দিলেন প্রভু। যা প্রত্যক্ষ করতে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ভিড় জমালেন প্রায় ৩ লক্ষ পুণ্যার্থী।
৯ দিনের মাথায় মাসির বাড়ি থেকে ফিরেও মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না জগন্নাথদেব। ভাই, বোনকে নিয়ে তিনদিন মন্দিরের বাইরে রথেই থাকতে হয়। এই তিনদিন তাঁদের রথে বসিয়েই পালিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। উল্টোরথের দিন অর্থাৎ শনিবার জগন্নাথ মহাপ্রভু বড়ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে রথে চেপে মাসির বাড়ি থেকে বাড়িতে ফেরেন। তিনজনের বিগ্রহ রথ থেকে নামিয়ে দিঘার মন্দির চত্বরে চালাঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বেদিতে স্থাপন করা হয় তাঁদের। রবিবার ভোর ৫টায় ফের তিনটি নিমকাঠের বিগ্রহ রথে তোলা হয়। আপাতত তিনদিন এখানেই থাকতে হবে জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রাকে। রথেই চলছে পুজোপাঠ, এমনকী রথেই দুপুরের ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়।
কথিত আছে, মাসির বাড়ি থেকে ফেরার পর মূল মন্দিরে ঢোকার অনুমতি পান না তিন ভাইবোন। কারণ, লক্ষ্মীদেবী পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁকে শ্রীমন্দিরে একা রেখে মাসির বাড়িতে আনন্দ করার খেসারত হিসেবে বাইরে থাকতে হয়। রবিবার একাদশী তিথিতে বিকেল ৫টায় পালিত হল সোনাবেশ। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে সোনার গয়নায় সাজিয়ে তোলা হয়। দ্বাদশীর সন্ধ্যায় পালিত হবে অধরপনা। রীতিমেনে, জগন্নাথদেবকে শরবত খাওয়ানো হবে। তারপরেই তৃতীয়ায় হবে রসগোল্লা উৎসব। এদিন জগন্নাথদেবকে রসগোল্লা নিবেদন করা হবে। লক্ষ্মীদেবীর মান ভাঙাতে রসগোল্লার হাঁড়ি ও শাড়ি লক্ষ্মীদেবীর জন্যে পাঠাবেন জগন্নাথ। তারপরই গর্ভগৃহে প্রবেশের সম্মতি প্রদান করবেন লক্ষ্মীদেবী। সবশেষে হবে নিলাদ্রীবিজয় উৎসব। ওই উৎসবের মধ্য দিয়ে তিনজনের বিগ্রহকে গর্ভগৃহে নিয়ে যাওয়া হবে।
এদিকে জগন্নাথদেবের সোনাবেশ দর্শন করতে এদিন সকাল থেকেই জগন্নাথ মন্দিরে ভিড় জমান পুন্যার্থীরা। প্রায় ৩লক্ষ পুন্যার্থী শুধুমাত্র এদিনই মন্দিরে ভিড় জমিয়েছেন বলে খবর। পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে মন্দিরের ভেতরে ও বাইরে। তবে ভক্তদের ভিড়ে হোটেল মালিক থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীরা খুশি। দিঘা-শংকরপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “উল্টোরথ শনিবার পড়ায় মানুষের ভিড় অনেক বেড়েছে। এমনিতেই জগন্নাথ মন্দিরের টানে পর্যটকেরা দিঘায় আসছেন। তারসঙ্গে শনি ও রবিবারের ছুটি। তাই প্রচুর মানুষ উল্টোরথে দিঘায় এসেছেন। জগন্নাথদেবের কৃপায় হোটেল ব্যবসা একটা জায়গায় পৌঁছেছে।”
কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাষ্ট কমিটির সদস্য রাধারমন দাস বলেন, “মাসির বাড়ি থেকে মহাপ্রভুর ফেরার পরে লক্ষ্মীদেবী পথ আটকায়। ফলে মন্দিরে প্রবেশ করতে না পেরে তিনদিন বাইরে থাকতে হয়। তাই প্রথা মেনে তিনটি বিগ্রহকে রথ থেকে নামিয়ে রাতে আটচালা ঘরে রাখা হয়। রবিবার ভোর ৫টায় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীকে রথে তোলা হয়। পুণ্যার্থীরা সকাল থেকেই দর্শন করতে শুরু করেন। বিকেল ৫টায় জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রাদেবীকে সোনাবেশে সাজিয়ে তোলা হয়।”