মিল্টন সেন, হুগল: বিভিন্ন জায়গা থেকে মহরমের শোকযাত্রা রওনা হয়েছে ইমামবাড়ার উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে তাজিয়া সহযোগে পৌঁছবে কারবালা ময়দানে। থিকথিকে ভিড় শহরের সর্বত্র। যানজট সামাল দিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সকাল থেকেই কর্মরত ছিল পুলিশ। শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণকারীদের সাহায্য করতে রাস্তায় নেমেছিলেন সুরজিত সি, সৌমিত্র সিংহ, শুভজিত সাহা, মৌ সাহার মতো অসংখ্য হিন্দু ভাই বোনেরাও। রবিবার মহরমের দিন জেলা সদর চুঁচুড়ায় নজরে পড়ল সম্প্রীতির এমনই ছবি। কাবেরী পাড়ার হনুমান মন্দির থেকে বিলি করা হচ্ছে সরবত।
হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার উদ্যোগে খোলা হয়েছে স্বাস্থ্য শিবির। কোথাও আবার খাওয়ানো হচ্ছে জল, দেওয়া হচ্ছে খাবার ইত্যাদি। রাস্তায় শোভাযাত্রার সঙ্গে ঘুরতে দেখা গেছে একাধিক স্বাস্থ্য কর্মীদের। মহরম কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই চলছিল প্রস্তুতি। শহরের প্রায় সব রাস্তা ধরেই মানুষ কারবালা ময়দানের দিকে এগোবেন। ওদিকে টানা বৃষ্টিতে শহরের রাস্তা ঘাটের হাল খারাপ।
রাস্তার একাধিক জায়গায় গর্ত হয়ে রয়েছে। পাথর উঠে এসেছে রাস্তায়। স্বাভাবিক কারণেই খালি পায়ে ওই রাস্তা ধরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে শোক যাত্রীদের। তাই সকাল থেকেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে, তাঁদের চলতে থাকা কর্মবিরতি উপেক্ষা করে ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নামেন পুরসভার সাফাই কর্মীরা। মুষলধারে চলতে থাকা বৃষ্টির মধ্যেই ঝাড়ু দিয়ে সরিয়ে দেন রাস্তায় পরে থাকা কুচো পাথর।
বিশেষ এই দিনটিতে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়েছিলেন ইমাম হুসাইন। তাঁর পর থেকেই এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এদিন মহরমের শোকে উপচে পড়া ভিড় নজরে পড়ল হুগলি ইমামবাড়ায়। হুগলি ইমামবাড়ায় প্রতি বছর খুব বড় করে মহরম পালিত হয়। এদিন ছিল ইসলামিক হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রথম মাস। মহরমের দশম দিন। মহরমের দিন ইসলাম ধর্মের মূলত সিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ তাজিয়া নিয়ে শোকযাত্রা বের করে থাকে। পাশাপাশি সুন্নি সম্প্রদায়ের মানুষ এদিন রোজা অর্থাৎ উপবাস পালন করেন।
বলা হয় মহরমের দশম দিনে কারবালার প্রান্তরে ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হজরত মোহাম্মাদের মেয়ের ঘরের নাতি ইমাম হুসাইন ও তার পরিবার শহীদ হয়েছিলেন। ইসমাল ধর্মের জন্য, মানবিকতা এবং ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ইমাম হুসাইন সহ ৭২ জন। সেই শহীদদের স্মৃতিতে ইমাম হুসাইনের কবরের আদলে তৈরি তাজিয়া বের করে কারবালায় নিয়ে গিয়ে মাটি দেওয়া হয়। আজকের এই দিনটিকে বলা হয় আশুরা। এদিন দুঃখের দিন। শোকার্ত থাকেন ইসলাম ধর্মের মানুষরা। এদিন হুগলি ইমামবাড়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে তাজিয়া আসে তারপর শোকযাত্রা কারবালায় যায়। এই মহরমে দেখাযায় একাধিক হিন্দুরাও সামিল হয়েছেন। মহরমকে ঘিরে এদিন ইমামবাড়া চত্ত্বরে এক সম্প্রীতির ছবি নজরে পরে। ইমামবাড়ার চার পাশে বসে মেলা। চলবে আগামী দশ দিন ধরে। চলে জমিয়ে বিকিকিনি।