নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। ঘটনাস্থল কোচবিহারের চকচকা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিনাইদহ। টিউশন পড়িয়ে এবং দলীয় কাজকর্ম সেরে রাত ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন কোচবিহার-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রাজু দে। বাড়ি থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরে তাঁর পথ আটকায় কালো রঙের একটি এসইউভি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি চলে তাঁকে লক্ষ্য করে। তাঁর ডান কাঁধে গুলি লাগে। গাড়ি নিয়ে তড়িঘড়ি চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় পুলিস গ্রেপ্তার করেছে কোচবিহার উত্তরের বিজেপি বিধায়ক তথা দলের সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুকুমার রায়ের ছোট ছেলে দীপঙ্কর রায়কে। আরেক ধৃতের নাম উত্তম গুপ্ত। শুধু তাই নয়, বিজেপি বিধায়কের কালো রঙের গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। অভিযোগ, ওই গাড়িতে এসেই গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার জেলার বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতাকে স্থানীয়রাই উদ্ধার করে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। রাতে তাঁকে দেখতে নার্সিংহোমে যান কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক সহ অন্যান্যরা। কেন দুষ্কৃতীরা এই তৃণমূল নেতাকে টার্গেট করল? নেপথ্যে কারণ কী? এসব প্রশ্নে আপাতত সরগরম কোচবিহারের রাজনীতি। যদিও বিজেপি বিধায়কের সাফ দাবি, তাঁর ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।
তদন্তে নেমে পুলিস প্রথমেই কালো গাড়ির খোঁজ শুরু করে। শুক্রবার সকালে পুলিস গ্রেপ্তার করে বিধায়কের ছোট ছেলেকে। পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘গুলি চালনার ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে একজন বিধায়কের ছেলে। বিধায়কের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’ ডান কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর এদিন নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে রাজু বলেন, ‘বিধায়ক চকচকায় আসেন না বললেই চলে। কিছুদিন আগে উনি একবার এসেছিলেন। তখন আমরা ওঁর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাই। সেই গাড়িতে এসেই রাতে আমার উপর হামলা চালানো হয়। বিধায়কের মদতেই তাঁর ছেলে এই কাজ করার সাহস পেয়েছে।’ তৃণমূলের জেলা সভাপতিও জানিয়েছেন, মাস খানেক আগে রাজু দে বিধায়কের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। সেই আক্রোশেই ওঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমনটা আশা করা যায় না। পাল্টা বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায়ের বক্তব্য, ‘কালো রঙের গাড়ি তো অনেক আছে। একই রঙের গাড়ি দেখেই আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। আমাকে এবং আমার ছেলেকে যেভাবেই হোক ফাঁসাতে এসব করা হচ্ছে। পুলিস সকালে এসে আমার গাড়িটি নিয়ে যায়। বড় ছেলেকেও তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে ছোট ছেলে থানায় গেলে ওকে গ্রেপ্তার করে। আসলে এখানে তৃণমূলের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই এসব করতে হচ্ছে ওদের। তদন্ত হলে সত্যিটা সামনে আসবে।’