• এখনও স্থায়ী অধ্যাপক নেই কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ক্ষোভ, স্কুলের বিল্ডিংয়েই চলছে পঠন পাঠনের কাজ
    বর্তমান | ০৩ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হলেও স্থায়ী অধ্যাপক পেল না কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। গেস্ট লেকচারার দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।‌ যদিও গেস্ট লেকচারারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০জনের বেশি গেস্ট লেকচারার রয়েছেন।‌ কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী অধ্যাপক না থাকায় প্রভাব পড়ছে ছাত্রীদের পঠন-পাঠনে। এমনটাই মনে করছে শিক্ষক মহল। পাশাপাশি, এত বছর পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় এখনও নিজস্ব বিল্ডিং পায়নি। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের বিল্ডিংয়েই কোনওক্রমে পঠন-পাঠন চলে। ফলে রাজ্য সরকারের সাধের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী এলেও, এখনও পরিকাঠামো তৈরি করা যায়নি। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষক মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এসেও বিল্ডিং, বাথরুমের মতো ‘বেসিক ফেসিলিটি’ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে ছাত্রীদের।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য তপতী চক্রবর্তী বলেন, আমি যা করার করছি। চিঠিপত্রও করা হয়েছে।‌ শেষ পর্যন্ত কতটা হবে, তা এখন বলা সম্ভব নয়। বর্তমানে স্থায়ী অধ্যাপক করা যাবে না। আমাদের এখনও ‘স্ট্যাটিউট’ তৈরি হয়নি।

    নদীয়া জেলার তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের পাশেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল তোরণ তৈরি করা রয়েছে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম চলে সেখান থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরের গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে। কলেজের পঠন-পাঠন হয় প্রশাসনিক ভবন থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে কলেজিয়েট স্কুলের বিল্ডিংয়ে। নদীয়া জেলায় দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম পুরনো হল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয়টি কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। এত বছর নদীয়া জেলার ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেই ভরসা করতে হতো। পড়াশোনা করতে জেলার বাইরেও যেতে হতো। ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। তখন জেলার ছাত্রীদের মনে বাড়ির কাছেই উচ্চশিক্ষা লাভের আশা জাগে। যারজেরে প্রতি বছর ছাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, এডুকেশন ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সহ ১১টা বিষয় পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি সেমেস্টারে প্রায় ৭০০ জন ছাত্রী রয়েছেন। গত বছর কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন ছাত্রী নেট কোয়ালিফাই করেছেন। শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি, নবাগত কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট সন্তোষজনক। অথচ, সেখানেই ছাত্রীরা পঠন-পাঠনের ন্যূনতম পরিকাঠামো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জানা গিয়েছে, এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ তৈরি হয়নি। এটি হল কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের লিপিবদ্ধ থাকা বিধান। ফলত, স্থায়ী অধ্যাপক পায়নি কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন কলেজের গেস্ট লেকচারারের উপরেই ছাত্রীদের পড়াশোনা নির্ভর করে।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ ক’বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু, পিডব্লুডির সঙ্গে সেই বরাদ্দকৃত টাকা নিয়ে সমস্যা হয়। সেই টাকা সরকারের কাছে ফিরে যায়।  তারপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন তৈরির পরিকল্পনা অথই জলে। প্রশাসনিক স্তরেও এবিষয়ে কথা এগয়নি। নিজস্ব পরিকাঠামো না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই নানা সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)