এই সময়, দিঘা: দিঘার নতুন মন্দিরের প্রথম রথ। সেই উপলক্ষে দিঘায় এক লক্ষের বেশি মানুষের ভিড় হবে—এমনটাই আশা করেছিলেন হোটেল মালিকরা। কিন্তু হোটেল মালিকদের তেমন লক্ষ্মীলাভ না হওয়ায় হতাশ তাঁরা। হোটেল সংগঠনগুলির দাবি, রথে হোটেলগুলির ৫০ শতাংশ ঘর খালিই পড়ে রইল।
ইতিমধ্যে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে বেশ কিছু হোটেলের রিসেপশনে টাঙানো হয়েছে রুমরেটের তালিকা। পর্যটকদের কাছ থেকে যাতে হোটেলগুলি কোনও ভাবে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া নিতে না পারে, তার জন্য দিঘা প্রশাসন এই নির্দেশ দেয়।
পাশাপাশি ওই রুমরেটের তালিকা পাঠানোর কথা পঞ্চায়েত অফিসেও। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে হারে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিঘার হোটেল ভাড়া নিয়ে লেখালেখি হয়েছে, মিডিয়া যে ভাবে হোটেল ভাড়া বাড়ার কথা লিখেছে, তাই রথে পর্যটকরা এলেন না। ভাড়ার আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে।
এক হোটেল মালিকের কথায়, ‘যে হারে দিঘায় ভিড় হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। প্রশাসনকেও ভিড় সামাল দিতে তেমন হিমশিম খেতে হলো না।’
ওল্ড দিঘা হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সহস্রাংশু মাইতি বলেন, ‘এ বার রথে দিঘাতে পর্যটকদের ভিড় না হওয়ার কারণই হলো হোটেল ভাড়া নিয়ে অপপ্রচার ও প্রশাসনের কড়াকড়ি। অনেক পর্যটক রথের পরে আসবেন বলে হোটেলের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন।’
হোটেল মালিকদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর দিঘা সফরের জন্যে ওল্ড দিঘার ভিতর দিয়ে নিউ দিঘা পর্যন্ত সমস্ত ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। দিঘা বাইপাশের মুখে নেমে ওল্ড দিঘা পর্যন্ত আসাটাই পর্যটকদের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের খবর জানার পরে অনেক পর্যটক রথের সময়ের সমস্ত বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। দিঘা–শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘কিছু হোটেল মালিকদের জন্য দিঘায় হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে। সে জন্য পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মাত্র ৫০-৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে।’
অন্য দিকে, প্রশাসন রথের জন্য দিঘায় যে কড়াকড়ি করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট নন পর্যটকরা। নদিয়া থেকে আসা কাশীনাথ দাস বলেন, ‘প্রশাসনের এত কড়াকড়ি যে নিউ দিঘা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে জগন্নাথের মাসির বাড়ি যেতে হচ্ছে। সঙ্গে ছোটরা রয়েছে। এ ভাবে এত হেঁটে যাওয়া যায়। এখন তো মনে হচ্ছে রথের সময়ে এখানে আসাই উচিত হয়নি।’
কলকাতার ঠাকুরপুকুর থেকে দিঘায় রথ দেখতে এসেছেন সরোজ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘এখন হোটেল ভাড়া ঠিকই আছে। ভাড়ার তালিকা কাউন্টারে টাঙানো আছে। তবে পথে এত কড়াকড়ি যে রথ পর্যন্ত যেতেই পারলাম না। এত হাঁটা যায় না।’
দিঘায় রথ দেখতে এসেছিলেন ওডিশা থেকে কিছু পর্যটক। রথের দড়ি টানতে না পেরে হতাশ তাঁরাও। ওডিশার ভোগরাই–এর সমীরণ বেহারা বলেন, ‘পুরীতে গেলেও ভিড়ের জন্য রথের দড়ি টানতে পারতাম না। তাই দিঘায় এলাম। কিন্তু এখানেও রথের দড়ি না টেনেই বাড়ি ফিরছি। ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়ে রথ দেখলাম।’
কটকের বাসিন্দা বিনয়কুমার বস্তিয়া মঙ্গলবার দিঘা বেড়াতে এসেছিলেন। ভেবেছিলেন রথের দড়ি স্পর্শ করবেন। কিন্তু প্রশাসনের কড়াকড়িতে তিনি তা পারেননি। বিনয়কুমার বলেন, ‘রথকে ছুঁয়ে থাকা আর দড়ি স্পর্শ করলেই কী রথের দড়ি টানা হয়? রথ টানার অনুভূতি অন্যরকম। দিঘাতে এসেও তা পেলাম না।’
তবে প্রশাসন ভিড় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী দিঘায় রয়েছেন। তাই একটু কড়াকড়ি করতে হয়েছে। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় বৃহস্পতিবার তেমন ভিড় হয়নি।’