কসবার কলেজে ধর্ষণ: সেই ‘অসহায়’ সাক্ষী রক্ষীকেও ধরল পুলিশ! তাঁর ঘরে নিয়ে গিয়েই নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রীর
আনন্দবাজার | ২৮ জুন ২০২৫
কসবার ধর্ষণের ঘটনায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ৫৫ বছর বয়সি নিরাপত্তারক্ষীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নির্যাতিতা অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে রক্ষী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন ‘অসহায় সাক্ষী’। তাই নির্যাতিতাকে কোনও সাহায্য করতে পারেননি। এমনকি, রক্ষীর ঘরে (গার্ডরুমে) নিয়ে গিয়েই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। সে সময়ে ঘরের বাইরে রক্ষীকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে পুলিশ ওই নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি ছিল। এ ছাড়া নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করা হয়।
সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি। নির্যাতিতা নিজেও টিএমসিপির সদস্য ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৫ জুন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতিতা অভিযোগপত্রে মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন ‘জে’ নামে। এ ছাড়া ‘এম’ এবং ‘পি’ নামের দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, প্রথমে ইউনিয়ন রুমের ভিতর তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয়। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন ‘জে’। বাইরে পাহারায় ছিলেন বাকি দু’জন। কলেজের মেন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রীকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। রক্ষীর কাছে তিনি সাহায্য চেয়েও পাননি।
নির্যাতিতা জানিয়েছেন, শাসকদলের ছাত্র পরিষদের নেতা হওয়ায় অভিযুক্তদের দাপট ছিল কলেজে। সেই কারণেই রক্ষীও ছিলেন ‘অসহায়’। অভিযোগ, ধর্ষণের কথা পুলিশকে জানালে তাঁর প্রেমিককে খুন করিয়ে দেওয়ার এবং বাবা-মাকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতাকে। অভিযুক্তেরা জানান, এ সব তাঁরা আগেও করেছেন! ইউনিয়ন রুমে হকি স্টিক দিয়ে নির্যাতিতাকে মারধরের চেষ্টাও করা হয়েছিল।
কলেজের এক নম্বর গেটে যে সিসি ক্য়ামেরা রয়েছে, তাতে ইউনিয়ন রুম দেখা যায়। সূত্রের খবর, এই সিসিটিভি ফুটেজটি তদন্তকারীদের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে। ইউনিয়ন রুমে ঘটনার সময়ে, আগে বা পরে কারা ছিলেন, বাইরে কারা ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রক্ষী সে সময়ে কী করছিলেন, ঘটনায় তাঁর ভূমিকা কী, পুলিশ সে সবও দেখছে। সিসি ক্যামেরার দিকে নজর রয়েছে তদন্তকারীদের। এ ছাড়া, শুক্রবারও ওই কলেজে গিয়েছিল ফরেন্সিক দল। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে তারা। পুলিশ সূত্রে খবর, কলেজ ক্যাম্পাসের মোট দু’টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এই ঘটনায় তদন্তের কাজে লাগতে পারে। তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে।
এই ঘটনার অন্যতম দুই অভিযুক্তকে ২৬ তারিখ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তৃতীয় অভিযুক্ত গ্রেফতার হন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। অভিযুক্তদের শুক্রবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।