• ল’কলেজের গার্ড রুমে গণধর্ষণ! ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত দুই প্রাক্তনী ও এক পড়ুয়া
    বর্তমান | ২৮ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আইন কলেজের ক্যাম্পাসের মধ্যেই প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে গণধর্ষণ! আর এই ভয়াবহ অভিযোগের ভরকেন্দ্রে ওই কলেজেরই দুই প্রাক্তনী ও এক পড়ুয়া। বুধবারের ঘটনা। আর বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিন অভিযুক্তকেই গ্রেপ্তার করেছে কসবা থানা। তাদের থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে দু’টি মোবাইল ফোন। তরুণীর পরনের পোশাক পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিকে। নির্যাতিতার গোপনাঙ্গ সহ দেহের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। গলায় কামড়ের দাগও। শুক্রবারই তিনজনকে কোর্টে তোলা হলে চারদিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। 

    নির্যাতিতার অভিযোগ, পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপের জন্য বুধবার বেলা ১২টা ৫ মিনিটে সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজে আসেন তিনি। কাজ শেষ করে আর পাঁচটা দিনের মতোই ইউনিয়ন রুমে বসেছিলেন। দুপুরে সেখানে আসেন তৃণমূল ছাত্র ইউনিয়নের মাথা তথা কলেজের চুক্তিভিত্তিক কর্মী মনোজিৎ মিশ্র। কলেজ ইউনিয়নে কে কী পদ পাবেন, তা ঠিক করেন এই আইনজীবীই। এমনকী ছাত্রীকে তিনিই কলেজের গার্লস সেক্রেটারি করেছিলেন। ৪টে নাগাদ ওই তরুণী বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়ে আসেন। তখনই তাঁকে ইউনিয়ন রুমে ডাকেন মনোজিৎ। সঙ্গে আরও ছ’জনকে। বৈঠক চলাকালীন আর এক অভিযুক্ত প্রমিত মুখোপাধ্যায় নির্যাতিতাকে বাইরে এনে জিজ্ঞেস করেন, তিনি মনোজিতের প্রতি কতটা ‘লয়াল’। ছাত্রী জানান, ওকে ভরসা করি। তখনই মনোজিৎ বেরিয়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। টোপ দেন, বিয়ে করলেই জিএসের পদ পাইয়ে দেব। রাজি হননি তরুণী। 

    সন্ধ্যা ৬টা ১০ নাগাদ তরুণী বেরতে গেলে মনোজিৎ কিছুক্ষণ থেকে যেতে বলেন এবং বেরিয়ে যান। ৭টা ৩০ নাগাদ কলেজে ফিরে আসেন তিনি। সঙ্গে প্রমিত ও আর এক অভিযুক্ত জায়িব আহমেদ। ওই দু’জন ‘দাদার’ নির্দেশ মতো কলেজের গেটে তালা দিয়ে দেন। এরপর মনোজিৎ ওই তরুণীকে জোর করে ইউনিয়ন রুমের বাথরুমের পাশে নিয়ে যান। প্রথমে নির্যাতিতা হাতে-পায়ে ধরেন, তারপর বাধা দেন। এর মধ্যেই প্যানিক অ্যাটাক হয় বলে দাবি তরুণীর। তিনি বারবার বলেন, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। নিদেনপক্ষে ইনহেলার চান। সেটা এনে দিলেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি তরুণীকে। উল্টে প্রমিত ও জায়িব তাঁকে জোর করে গার্ড রুমে নিয়ে যান। গার্ডকে বলেন বাইরে বসতে। ওখানেই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। এমনকী ‘দাদার’ দুই সহযোগী তাঁর নগ্ন ভিডিও পর্যন্ত তুলে রাখে। মনোজিৎ ভয় দেখান, কথামতো কাজ না করলে এই ভিডিও ভাইরাল হবে। খুন হবে তাঁর বয়ফ্রেন্ডও। এরপর নির্যাতিতাকে হকি স্টিক দিয়ে মারধর করা হয়। গণধর্ষণের পর রাত ১০টা ৫০’এ ছাড়া হয় তাঁকে। বেরিয়েই তিনি বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানান। তিনিই এসে মেয়েকে নিয়ে যান। পরদিনই কসবা থানায় অভিযোগ হয়। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই পুলিস তালবাগান থেকে মনোজিৎ ও জায়িবকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার সকালে হাওড়া থেকে ধরা হয় প্রমিতকে। ইতিমধ্যে জাতীয় মহিলা কমিশন এই ইস্যুতে স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করেছে এবং কলকাতার পুলিস কমিশনারের কাছে দ্রুত, কার্যকরী তদন্তের দাবি জানিয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)