• কসবার কলেজে ধর্ষণ: অন্যতম অভিযুক্ত ‘এম’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা? কী বলছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন?
    আনন্দবাজার | ২৭ জুন ২০২৫
  • কসবার আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, প্রথমে তাঁদের নাম বা পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে এক জনকে ‘এম’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, তিনি তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে যুক্ত। বাকি দুই ধৃতকে ‘জে’ এবং ‘পি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে ধৃতদের নাম প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনার পর শাসকদলকে একযোগে আক্রমণ শুরু করেছে বিরোধীরা। টিএমসিপি জানিয়েছে, ধৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

    সূত্রের খবর, সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অন্য়তম অভিযুক্ত হিসাবে যে ‘এম’-এর নাম উঠে আসছে, তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের পরিচয় রয়েছে। সেখানে নিজেকে তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। নিজের পেশাগত পরিচয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন আলিপুর আদালতে ‘ক্রিমিনাল লইয়ার’ বা ফৌজদারি আইনজীবী। অভিযোগ, বাকি দুই ধৃতও টিএমসিপির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। ওই কলেজের অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার সকালে বলেছেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানতাম না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত আমাদের ক্লাস চলে। এই ঘটনা ঘটেছে তার অনেক পরে। এখন আমি কলেজে যাচ্ছি। তার পর বিষয়টি দেখছি। তবে এই ধরনের জঘন্য ঘটনার দায় কলেজ কোনও ভাবেই এড়িয়ে যাবে না। আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হওয়া উচিত, তার ব্যবস্থা করা হবে।’’ পরে কলেজে পৌঁছে তিনি জানান, অভিযুক্তদের এক জন ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে ছিলেন। জিবি রেজ়লিউশনের মাধ্যমে ৪৫ দিনের জন্য তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। জিবি প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কলেজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।

    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষকে লিখিত ভাবে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ঘটনার পর কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা রিপোর্টে উল্লেখ করতে হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের মধ্যে তৈরি করা হবে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি। তার পর আচার্যকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শান্তা আরও বলেন, ‘‘এটা একটা জঘন্য ঘটনা। তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। লুম্পেনদের রাজনৈতিক মদত দেওয়া হয় বলেই এই ধরনের ঘটনা কলেজগুলিতে ঘটে চলেছে। এর বিহিত হওয়া প্রয়োজন। অন্যান্য কলেজেও নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করা হবে।’’

    পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কসবা থানায় তরুণী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পার্ক সার্কাসের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ওই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। বয়ান রেকর্ড করা হয় সাক্ষীদের। এর পর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তৃতীয় অভিযুক্ত ধরা পড়েন। শুক্রবার তাঁদের আলিপুরের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ধৃতদের চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব সংগঠনের সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে অভিযুক্তদের সঙ্গে টিএমসিপির যোগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী নন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সে বর্তমানে কলেজের কর্মচারী। ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নয়। যদি এই ঘটনা এবং অভিযোগ সত্যি হয়, তার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ আইনানুগ ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে হয়, তার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ লড়বে।’’

    বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, অভিযুক্তেরা ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। অভিযুক্ত ‘এম’ টিএমসিপির গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রথযাত্রা উপলক্ষে এখন দিঘায়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে কটাক্ষ করেছেন। জানিয়েছেন, কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের কর্তারা এখন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ব্যস্ত। তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।

    রথযাত্রার দিন এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। প্রকাশ্যে না-বললেও একান্ত আলোচনায় অনেকেই মেনে নিচ্ছেন, আরজি করের ঘটনার সঙ্গে কসবায় কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে এই ধরনের ধর্ষণকাণ্ডের মিল রয়েছে। একটি শিক্ষাক্ষেত্রে হয়েছে, অন্যটি কর্মক্ষেত্রে। আরজি করের মতোই এই ঘটনাও অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতে পারে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)