• ওই সন্ধ্যায় কলেজের ভিতর ঠিক কী ঘটেছিল? কী জানালেন নিগৃহীতা ছাত্রী?
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৫
  • আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের পরে কলকাতা শহরের বুকে ফের নারী নির্যাতনের ঘটনা। আইন কলেজের মধ্যে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল সেই কলেজেরই দুই বর্তমান ছাত্র এবং এক প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত প্রাক্তন ছাত্র মনোজিৎ মিশ্র এখন ওই কলেজেরই অস্থায়ী কর্মী। ২৫ জুন, বুধবার সন্ধ্যার পরে কলেজের মধ্যেই দফায় দফায় ওই ছাত্রীকে হেনস্থা করা হয়, তারপরে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কী জানিয়েছেন নিগৃহীতা?

    ২৫ জুন কলেজে পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিল-আপ ছিল। সেই কারণেই কলেজে গিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। দুপুর ১২টা বেজে ৫ মিনিটে কলেজে পৌঁছন তিনি। ফর্ম ফিল-আপ করার পরে ইউনিয়ন রুমে গিয়ে বসেন তিনি। তার কিছুক্ষণ পরেই মূল অভিযুক্ত ইউনিয়ন রুমে ঢোকে। নিগৃহীতা পড়ুয়া জানাচ্ছেন, মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ওই কলেজেরই প্রাক্তন পড়ুয়া এবং বর্তমানে কলেজের কর্মী। ওই কলেজের টিএমসিপি ইউনিট দেখাশোনা করে মনোজিৎ, এমনটাই জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। সে দিন কলেজের টিএমসিপি ইউনিটে কে কোন পদ পাবে, সেটা বাছাই করে দিচ্ছিল মনোজিৎ। অভিযোগকারী ছাত্রীকে গার্লস সেক্রেটারির পদ দেওয়া হয়। এরপরে বিকেল চারটে নাগাদ কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন অভিযোগকারী ছাত্রী। কিন্তু অন্য এক জনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ইউনিয়ন রুমের সামনে বসে পড়েন তিনি।

    এর কিছুক্ষণ পরে বিস্কুটের প্যাকেট হাতে ফিরে আসে মনোজিৎ। তখনই এই ছাত্রীকে জরুরি কথা রয়েছে বলে ইউনিয়ন রুমের ভিতরে ডেকে নেয় সে। তখন ইউনিয়ন রুমের ভিতরে সাত জন ছিলেন। সেখানেই টিএমসিপি ইউনিট নিয়ে কথা শুরু হয়। তখনই নিজের ক্ষমতার কথা জাহির করছিল মনোজিৎ, দাবি ছাত্রীর। এর পরে আর এক অভিযুক্ত ওই ছাত্রীকে বাইরে ডেকে নিয়ে গিয়ে মনোজিতের প্রতি তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সেই সময় ওই ছাত্রী তাকে বলে, যে তিনি ইউনিটের প্রতি এবং মনোজিতের বিশ্বাসের দাম রাখবেন এবং যে দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছে, সেটা বজায় রাখবেন। এর কিছুক্ষণ পরে মনোজিৎ তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে।

    ছাত্রীর অভিযোগ, সেই সময়েই মনোজিৎ তাঁকে পছন্দ করার কথা বলে। প্রেমিকা থাকলেও মনোজিৎ তাঁর প্রেমে পড়েছে বলে দাবি করেছিল। মনোজিৎ তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় বলেও জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেন অভিযোগকারী ছাত্রী। তাঁর প্রেমিক রয়েছেন সেই কারণেই প্রস্তাব নাকচ করছেন, সেটাও জানান বলে দাবি তাঁর।

    এরপরে সন্ধ্যা ৬টা ১০ নাগাদ বাকি পড়ুয়ারা ইউনিয়ন রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বেরোতে গেলে তাঁকে কিছুক্ষণ থেকে যেতে বলে মনোজিৎ। তারপরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ কলেজের বর্তমান গার্লস সেক্রেটারি কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে যান। ঠিক তারপরেই কলেজ থেকে বেরনোর চেষ্টা করেন ওই ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ, ঠিক ওই সময়েই মনোজিৎ তাঁকে থামায়। সঙ্গে সঙ্গে বাকি দুই জনকে চোখের ইশারায় বাইরে চলে যেতে বলে। ওই দুইজন বাইরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

    তারপরেই মনোজিৎ তাঁকে টানতে টানতে শৌচাগারের কাছে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন মনোজিৎকে সর্বশক্তি দিয়ে বাধা দেন ওই ছাত্রী। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, এই সময়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি। তা সত্ত্বেও মনোজিৎ ধর্ষণ করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এরপরেই প্যানিক অ্যাটাক হয় ওই ছাত্রীর, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। তখন মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ বাকি ২জনকে ভিতরে ডাকে।

    নিগৃহীতা বারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও কেউ সেটা শোনেনি বলে অভিযোগ। এরপরে ইনহেলার দেওয়ার জন্য কাতর আর্জি জানান ওই ছাত্রী। এক অভিযুক্ত সেটা কিনেও আনে। ইনহেলার নিয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করার পরে কলেজ ছেড়ে বেরোতে যান ওই ছাত্রী, সেই সময়ে তিনি দেখেন কলেজের মূল দরজা তালাবন্ধ রয়েছে। কলেজের নিরাপত্তা রক্ষী অসহায়ের মতো বসেছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী।

    ওই ছাত্রীর অভিযোগ, এর পরে মনোজিতের নির্দেশে বাকি ২ জন জোর করে তাঁকে ইউনিয়ন রুমে নিয়ে যায়। মনোজিতের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তাঁকে ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগপত্রে লিখেছেন ওই ছাত্রী। এরপরে মনোজিতের নির্দেশে তাঁকে জোর করে নিরাপত্তা রক্ষীর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তা রক্ষীকে বাইরে চলে যেতে বলা হয়। এরপরেই মনোজিৎ তাঁকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ছাত্রীর। বাধা দিতে গেলে, ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

    নিগৃহীতা ছাত্রীর অভিযোগ, বাধা দিলে প্রেমিককে খুন করে দেওয়ার এবং বাবা-মাকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেয় মনোজিৎ। তারপরেও বাধা দেওয়ায় ২টি ভিডিয়ো দেখানো হয় তাঁকে। ছাত্রীর অভিযোগ, ধর্ষণের সময় তাঁর নগ্ন অবস্থার ভিডিয়ো তোলা হয়েছিল, সেটা দিয়েই ভয় দেখানো হয়েছে। বাধা দিলে ভিডিয়ো সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছে মনোজিৎ। এমনকী পরে যে কোনও সময় ডাকলেই তাঁকে মনোজিতের কাছে আসতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। যখন মনোজিৎ ধর্ষণ করেছে তখন বাকি ২ জন ওখানে দাঁড়িয়ে দেখছিল বলেও অভিযোগ।

    বাধা দেওয়ার সময়ে তাঁর মাথায় জোরে চোট লাগে বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। তারপরেও তাঁকে ছাড়া হয়নি। মনোজিৎ তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ। এরপরে আর বাধা দিতে পারেননি তিনি। প্রায় মৃতের মতো মাটিতে পড়েছিলেন ওই ছাত্রী। ধর্ষণ করার পরে বেরিয়ে যায় মনোজিৎ। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ওই ঘরের বাইরে বেরোন ওই ছাত্রী। সোজা যান ইউনিয়ন রুমে। সেখানেও তাঁকে বিষয়টি লুকিয়ে রাখার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

    নিগৃহীতা ছাত্রী জানিয়েছেন, ওই ঘটনার সময়ে তাঁর ফোন এক অভিযুক্তের কাছে ছিল। ওই ফোন নিয়ে কলেজের বাইরে বেরিয়ে আসেন ওই ছাত্রী। তারপরে বাবাকে ফোন করে ডাকেন। বাড়িতে সব জানানো পরে, বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নিগৃহীতা ছাত্রী।

  • Link to this news (এই সময়)