• দক্ষিণ কলকাতার কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ধৃত ৩
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ জুন ২০২৫
  • খাস কলকাতায় কলেজের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং কর্মী। বাকি দু’জন কলেজের পড়ুয়া এবং কর্মী। দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকার একটি নামী আইন কলেজে ঘটেছে এই কাণ্ড।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে ১০টা ৫০-এর মধ্যে ওই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এরপর কসবা থানায় আসেন নির্যাতিতা। কলেজেরই দুই কর্মী ও একজন প্রাক্তন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এরপর পুলিশি তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের।

    বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থ শঙ্কর শিশু রায় উদ্যানের সামনে থেকে মনোজিৎ মিশ্র (৩১) ও জাইব আহমেদ (১৯)-কে আটক করে কসবা থানার পুলিশ। ওই রাতেই পুলিশ প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) নামে অন্য এক অভিযুক্তের সন্ধান পায়। পরে তিনজনকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

    ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ওই কলেজের প্রাক্তনী এবং পেশায় আইনজীবী। বর্তমানে তিনি কলেজের কর্মী বলে দাবি করেছেন অনেকে। এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সাক্ষীদের বয়ানও রেকর্ড করে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয় এবং বর্তমানে তা ঘিরে রাখা হয়েছে।

    ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফরেনসিক টিম। ধৃত তিন জনের কাছ থেকেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের মোবাইল ফোন। তাঁদের শুক্রবার আদালতে হাজির করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। বিচারক চারদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

    কলেজের জিএস পদের লোভ দেখিয়ে তরুণীকে একটি রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্র (যদিও একাংশের দাবি, তিনি কলেজের কর্মী) কীভাবে এত রাতে কলেজে ঢুকল? নিরাপত্তারক্ষীরাই বা কোথায় ছিলেন? আর এত বড় ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ টের পেল না?

    বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, অভিযুক্তেরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রেসিডেন্টও। নিজের পেশাগত পরিচয় হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, আলিপুর আদালতে ‘ক্রিমিনাল লইয়ার’ বা ফৌজদারি আইনজীবী।

    তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সে বর্তমানে কলেজের কর্মচারী। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নয়। যদি এই ঘটনা এবং অভিযোগ সত্যি হয়, তার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ আইনানুগ ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে হয়, তার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ লড়বে।’

    সূত্রের খবর, ২৫ জুন কলেজে অনুষ্ঠান ছিল, প্রাক্তনী হিসেবে সেখানে যোগ দিতে এসেছিলেন মনোজিৎ মিশ্র। তারপরেই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। এদিকে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ওই দিন কলেজে কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমাকে নাইট গার্ড শুক্রবার সকালে বলেন, পুলিশ থেকে লোক এসেছিল। কলেজের ২টো রুম সিল করা হয়েছে।’

    কিন্তু কোন কোন রুম সিল হয়েছে? সেটা জানাতে পারেননি তিনি। কলেজ টাইমের অনেক পরে এই ঘটনা ঘটেছে। কী ভাবেই ওই সময়ে কলেজের ভিতর ঢুকল বা থাকল অভিযুক্তরা? সেই বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনি। ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, ‘ওই আইন কলেজের গভর্নিং বডির সুপারিশে অস্থায়ী চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র। অফিসিয়াল কিছু কাজ করতেন মনোজিৎ।’

    তৃণমূলের তরফেও কসবার ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। দলের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি পোস্টে হয়েছে, ‘কলকাতা পুলিশ তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হচ্ছে।’ ফের একবার অপরাজিতা বিল-এর পক্ষে সওয়াল করা হয় তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলে। এই বিল বাস্তবায়িত করার জন্য বিজেপি কোনও পদক্ষেপ করেনি, সেই অভিযোগও করেছে রাজ্যের শাসকদল।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)