• রশি সবার, দিঘায় জগন্নাথদেবের ভোগে বিদেশি ভেজ ডিশও
    এই সময় | ২৭ জুন ২০২৫
  • সুপ্রকাশ মণ্ডল, দিঘা

    দু’পা বাড়ালেই সমুদ্র। নতুন করে তৈরি হয়েছে ঘাট। ঠিক পাশেই জগন্নাথ মন্দির। তবে এটি পুরীর মন্দিরের আদলে তৈরি হওয়া নতুন মন্দির নয়। বছর পঁচিশেক আগে তৈরি এই জগন্নাথ মন্দিরই আজ থেকে মহাপ্রভুর মাসির বাড়ি।

    নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির থেকে এক কিলোমিটার পথের দু’দিকেই ব্যারিকেড। তবে ভক্তরা ব্যারিকেডের বাইরে থেকেও রথের রশি ছুঁতে পারবেন। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এমন ব্যবস্থা।

    অভিনবত্ব থাকছে জগন্নাথের ভোগেও। আজ, শুক্রবার রথযাত্রায় প্রভুকে যে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হবে, তাতে থাকবে বিদেশি ভক্তদের তৈরি করা নিরামিষ পদও। এ দিন পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব কিছু খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।

    তিনি জানিয়েছেন, কুম্ভের মতো দুর্ঘটনা যাতে না–ঘটে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আজ দুপুর দুটোয় মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় ঝাড়ু দিয়ে রথযাত্রার সূচনা করবেন।

    এই মন্দির উদ্বোধনের পর থেকেই দিঘা-পুরী টানাপড়েন ছিল। বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরে পুরীর গজপতি মহারাজা দিব্যসিংহ দেব বলেছেন, ‘দিঘার মন্দির খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু তা শাস্ত্র এবং পরম্পরার বিরোধী।’

    এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘যদি ভালো হয়, ভালো বলবেন। আমি অত শাস্ত্র বুঝি না। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান রয়েছে, তার থেকে বড় ধর্ম কী হতে পারে?’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কই ওডিশা ভালো কিছু করলে আমরা তো হিংসা করি না।’

    দিঘা জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্টি কমিটির সদস্য তথা ইসকন (কলকাতা)–এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস বলেন, ‘পুরীর রাজা আমাদের একটি দীর্ঘ চিঠি পাঠিয়েছিলেন। আমরা শাস্ত্রমতেই তার জবাব দিয়েছি। তার আর কোনও জবাব আসেনি।’

    দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের সূচনার দু’মাসের মাথায় রথযাত্রা। এমনিতেই এই মন্দির দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় মাত্রাছাড়া। তার উপরে প্রথম রথযাত্রা। স্বাভাবিক ভাবেই দিঘার সব হোটেল ভর্তি। স্নানযাত্রার পরে ১৫ দিন বন্ধ ছিল মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজা।

    কারণ সেই সময়ে জ্বরে কাবু হন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়েছেন সকলে। সকালে নেত্র উৎসবের পরে সাদা পোশাক ছাড়িয়ে তাঁদের ফের রঙিন পোশাক পরানো হয়।

    তার পরেই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। দুপুরের দিকে প্রস্তুতি দেখতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার-সহ অন্য আধিকারীরা। রথের যাত্রাপথে কোথায় কী থাকবে, নিরাপত্তা কেমন হবে — তা ম্যাপ দেখে বুঝে নেন মমতা। প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন তিনি।

    রাধারমণ দাস বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিজের বাড়ির গাছের আম এবং পেয়ারা এনেছেন। প্রভুর ভোগে নিবেদন করা হয়েছে। জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার কিছু পোশাক তিনি এনেছেন। সেগুলি রাতেই তাঁদের পরানো হবে।’ তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দান করা পাঁচ লক্ষ এক টাকায় সোনার ঝাঁটা তৈরি করা হয়েছে।

    তার আগে সকাল ৯টা নাগাদ ‘পহণ্ডি বিজয়’ রীতির মধ্যে দিয়ে প্রভুর বিগ্রহ রথে স্থাপন করা হবে। ‘পহণ্ডি বিজয়’–এর অর্থ প্রভু পায়ে হেঁটে রথে আসীন হবেন। বিশেষ শোভাযাত্রার মাধ্যমে কীর্তন গান গাইতে গাইতে এই রীতি পালিত হবে। রাধারমণ জানান, এতে অংশ নেবেন রাশিয়া, ইউক্রেন, চিন এবং জাপান থেকে আগত ৫০ জন ভক্ত। তাঁদের কেউ কেউ প্রভুর জন্য রান্না করবেন নিজেদের দেশের বিশেষ নিরামিষ পদ।

    মন্দির থেকে মাসির বাড়ি মাত্র এক কিলোমিটার পথ। বৃহস্পতিবারই ব্যারিকেড বরাবর দু’দিকে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে রশি। রথের রশির সঙ্গে এই রশিগুলিকে জোড়া হবে। ফলে ব্যারিকেডের বাইরে ভক্তরা সহজেই রশি স্পর্শ করতে পারবেন। রাধারমণ জানান, পুরীর মন্দিরে বিদেশিদের প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু দিঘার জগন্নাথ মন্দির সকলের জন্য খোলা।

  • Link to this news (এই সময়)