দিঘা VS পুরী রাজনীতি তুঙ্গে, দুই রথযাত্রায় পুজোর আচার-রীতিতে কী ফারাক?
আজ তক | ২৬ জুন ২০২৫
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুরীতে চল আসছে রথযাত্রা উৎসব। এটি বৃহত্তম হিন্দু রথ উৎসব হিসাবেও বিবেচিত হয়। পুরী থেকে ঠিক সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনস্থল বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সৈকত স্থিত দিঘা। এবারে নবতম সংযোজন পুরীর আদলে জগন্নাথ মন্দির। সেই সঙ্গে এবছর মহাধূমধাম করে পালিত হতে চলেছে রথযাত্রা। চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতিও। তবে কি পুরীর মতো দিঘাতেও মিলবে একই ঐতিহ্য, ভক্তি, রীতি? নাকি স্রেফ দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো? ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে পৃথক পুরী ও দিঘার রথযাত্রা?
দিঘার জগন্নাথ মন্দির বিতর্ক
অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে উদ্বোধন হয় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। এরপর থেকে পুরীর সঙ্গে টেক্কা দিতে শুরু করেছে এই মন্দির। মন্দিরের উদ্বোধন লগ্ন থেকেই 'জগন্নাথ ধাম' নাম বিতর্ক। সরকারি টাকায় মন্দির নির্মাণ, প্রসাদ বিলি থেকে নিমকাঠ চুরির মতো অভিযোগ ওঠে। একদিকে যখন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ পৌঁছে যাচ্ছে বাংলার মানুষের বাড়ি বাড়ি, অন্যদিকে বিজেপির বিরোধী দলনেতার দাবি, পুরীর প্রসাদ পৌঁছে দেবেন বাংলার মানুষের কাছে। দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। মন্দিরকে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি বলেও দাগিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু।
পুরীর রথযাত্রা
পুরীর রথযাত্রা নবদিন যাত্রা, দশাবতার যাত্রা এবং গুন্ডিচা যাত্রা নামেও পরিচিত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে ভগবান জগন্নাথ নামে পূজিত হন। ওড়িয়া পঞ্জিকা অনুসারে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই উৎসবটি। যার টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার ভক্ত।
পুরী ও দিঘার রথাযাত্রা কোন কোন ক্ষেত্রে পৃথক?
পুরী ও দিঘার রথযাত্রা পালিত হবে দু'টি রীতিতে। bangla.aajtak.in-কে ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস আগেই জানিয়েছিলেন, একই দিনে দিঘা এবং পুরীতে উৎসব পালন করা হলেও রথযাত্রার যে বিধিগুলি রয়েছে তা সম্পূর্ণ আলাদা। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা উৎসব পালন করা হচ্ছে বৈষ্ণব ধর্মের রীতি মেনে। পুরীতে হিন্দু রীতি মানা হয়, আলাদা মন্ত্র পড়া হয়। দিঘাতে রথযাত্রার মন্ত্রচ্চারণ আলাদা। ওখানে পুরীর শঙ্করাচার্যের নিয়ম অনুযায়ীই রথযাত্রার রীতি পালন হবে।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে হিন্দু ছাড়া অন্য কোনও ধর্মের মানুষকে জগন্নাথধামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ইসকন সদস্যদের মধ্যে যারা হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত এবং ঐতিহ্যবাহী হিন্দু পরিবার থেকে এসেছেন, তাদের প্রবেশে কোনও বাধা নেই। তবে যারা নব্য-ধর্মান্তরিত বা ঐতিহ্যবাহী হিন্দু নন, তাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, দিঘার মন্দিরের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে ইসকনের কাছে। সে কারণে দিঘার মন্দিরে জাত-পাতের কোনও ব্যাপার নেই। জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসতে পারবেন, রথযাত্রার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন।
পুরীর মতোই, দিঘাতে তিনটি পৃথক রথে চেপে যাবেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। তিনটি সুবিশাল রথ তৈরি করা হয়েছে মন্দির চত্বরে। দারুব্রহ্ম রথে করে মাসির বাড়িতে গেলেও পাথরের বিগ্রহ থেকে যাবে দিঘা জগন্নাথ ধামে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সামনে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার কথা। যে রাস্তা দিয়ে রথ যাবে ওই রাস্তাই ঝাঁট দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা খরচে দিঘা থানা সংলগ্ন পুরনো জগন্নাথ মন্দিরকে মাসির বাড়ি হিসেবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।