• লক্ষ্য ২০২৬, ক্ষত সামলাতে শাসকদলের অস্ত্র জনসংযোগ
    এই সময় | ২৪ জুন ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    দুয়ারে সরকার শিবির থেকে সরকারি প্রকল্প পৌঁছেছে ঘরে ঘরে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে কন্যাশ্রী, নানা ধরনের মানবিক প্রকল্পের সুবিধাও পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের কাছে। কিন্তু তার প্রতিফলন ভোটবাক্সে কেন দেখা যায় না?

    আগামী বছরে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসে জেরবার দশা শাসকদলের নেতা-কর্মীদের। শেষ লোকসভা নির্বাচনের ফলের প্রেক্ষিতে শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের হাত থেকে রাশ অনেকটাই বেরিয়ে গিয়েছে। কী ভাবে দ্রুত সেই মেরামত সম্ভব, সেই চিন্তা কপালের ভাঁজ গভীর করেছে নেতাদের।

    ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সংগঠনে আমূল পরিবর্তন এনেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছে আগামী বিধানসভা নির্বাচন কার্যত অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

    সম্প্রতি জেলার ১৮টি ব্লকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা সভাপতি। ছিলেন এলাকার বিধায়কও। অন্ডাল থেকে রানিগঞ্জ হয়ে সালানপুর, সর্বত্র জেলা সভাপতি যে প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছেন তা হলো, রাজ্য সরকারের সমস্ত ধরনের প্রকল্পের সুফল সাধারণ মানুষ পেলেও তার বহিঃপ্রকাশ কেন ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে না?

    তা হলে কি ধরে নিতে হবে যে, মানুষের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের অথবা খনি-শিল্পাঞ্চলের স্পন্দন এখন ঠিক মতো ধরতেই পারছে না দল?

    একই প্রশ্ন কর্মীদের সামনে রেখেছেন বারাবনির বিধায়ক এবং আসানসোল পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায়। উদাহরণ দিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ, এখানকার ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল গত লোকসভা ভোটে জিতেছে।

    ৫টি পঞ্চায়েতে তৃণমূল হেরেছে। এমনকী ফুলবেড়িয়া বোলকুণ্ডা পঞ্চায়েতে ৬টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৫, তৃণমূল ১! কেন এই বৈপরীত্য?

    সেই ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নিত্যদিন পরিষেবা এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে খুব বড় একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, অনেক এলাকায় নিচু স্তরে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আচরণে উদ্ধত দেখা দিয়েছে।

    আবার কোনও ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সামান্য একটা সই করাতে গিয়ে এলাকার মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অহেতুক তাঁদের ঘোরানো হচ্ছে। সর্বোপরি মানুষের সঙ্গে ন্যূনতম যোগ এখন নেই নেতাদের।

    সালানপুর ব্লকের গ্রামগুলির কথাই ধরা যাক। শুধু ৩০ হাজার জনকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বলেই নয়, ১০ হাজার জনকে বৃদ্ধ ভাতা দেওয়া হয়েছে। এই জেলায় সবচেয়ে বেশি ‘বাংলার বাড়ি’-র সুবিধা পেয়েছেন মানুষ। তার পরেও শাসকদল জমি হারাচ্ছে!

    আসানসোল পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে উত্তর এবং দক্ষিণ আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া মিলিয়ে ১০৬টি ওয়ার্ডের ৬৬টি আসনে বিজেপি এগিয়েছিল।

    সাধারণ মানুষের একটি অংশের ইঙ্গিত অহেতুক দাদাগিরির সঙ্গে আর্থিক দুর্নীতিকে মোটেও তাঁরা ভালো নজরে দেখছেন না। উল্টে কিছু নেতার উদ্ধত হাবভাবে নষ্ট হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। এই পরিস্থিতিতে হারানো জমি ফিরিয়ে আনার কঠিন পরীক্ষাই হতে চলেছে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন।

  • Link to this news (এই সময়)