নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পর্ণশ্রীতে গণপিটুনিতে মৃত মহেন্দার সিং ও জখম দীপক সিং জুয়েলারির দোকানে নকল সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার ‘সিন্ডিকেট’ খুলে বসেছিল। তাদের অধীনে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক কাজ করছে। তারা পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একই কায়দায় প্রতারণা করে বেড়াচ্ছে। তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে পুলিসের। শ্বশুর মহেন্দার ও জামাই দীপক মিলে কলকাতার কত জায়গা থেকে এভাবে টাকা হাতিয়েছিল, তালিকা তৈরি করছেন তদন্তকারীরা। এর পাশাপাশি, গণপিটুনির অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই সোনা বন্ধক রেখে মহেন্দার-দীপককে ঋণ দিয়েছিল কি না, তা জানতেও ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
শনিবার রাত ২.৩০টা নাগাদ পর্ণশ্রীর ধর্মরাজতলায় একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে ডেকে এনে পিটিয়ে খুন করা হয় মহেন্দার সিংকে। ব্যাপক মারধর করা হয় তার জামাই দীপককে। সে কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচে। রাতে টহলরত পুলিস জখম অবস্থায় দীপককে উদ্ধার করার পর গোটা ঘটনা জানা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার হয় মহেন্দারের নিথর দেহ। দীপককে হাসপাতালে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিস তাদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে জানতে পারে। জানা যায়, রাজস্থানে থাকাকালীন শ্বশুর-জামাই এই কাজ শুরু করে। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে ঢুকে তারা একই কায়দায় প্রতারণা চালিয়ে যেতে থাকে। গয়নার দোকানদারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রথমে কিছু ঋণ শোধ করে দিত তারা। সেই মতো নকল সোনা তুলে নিত। আবার কিছুদিন পর ওই দোকানে হাজির হয়ে আরও বেশি নকল সোনা বন্ধক রেখে আরও বেশি টাকা ধার নিত। প্রথমে তারা দু’জনে এই কারবার শুরু করলেও পরে তাদের সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেয়। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে ‘সিন্ডিকেট’-এর জাল। সব জায়গা থেকে হাতানো টাকা এই দু’জনের কাছেই জমা পড়ত। তারাই সবার মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিত সেই টাকা। তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, প্রতারণা থেকে আসা টাকায় তারা নতুন সোনাও কিনে পাঠিয়ে দিত রাজস্থানে বাড়িতে। এখান থেকেই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, রীতিমতো ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করেই চলছে লোক ঠকানো। তাদের গ্রুপে যে ২৫-৩০ জন রয়েছে, বেশিরভাগই রাজস্থানের। কোনও জায়গাতেই দেড় থেকে দু’মাসের বেশি থাকত না মহেন্দার ও দীপক। বেহালা এলাকা ছাড়াও একাধিক জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে একই কায়দায় টাকা হাতিয়েছে বলে অভিযোগ। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের তারা বলত, ফেরি করে বেড়ায় তারা। বাড়িতে টাকার দরকার হওয়ায় সোনার গয়না বন্ধক রাখতে এসেছে। এমন ঠিকানাই তারা জুয়েলারি দোকানের মালিককে দিত, যেখানে তারা বেশ কিছুদিন ধরে থাকছে। ফলে সেই ঠিকানায় খোঁজ নিতে গেলেও কোনও অসঙ্গতি নজরে আসত না। তাছাড়া, তারা ঘনঘন মোবাইল নম্বর পাল্টে ফেলত, যাতে প্রতারিতরা যোগাযোগ করতে না পারে। গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে যে সোনার দোকানদারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে মহেন্দার ও দীপকের বন্ধক ও ঋণ সংক্রান্ত নথি চেয়েছে পুলিস।