৫ মাসে পরকীয়ায় পলাতক ৫০০ বধূ, সামাজিক উদ্বেগের ছবি বারাসত পুলিস জেলায়
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: কারও স্বামী কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে বা বিদেশে থাকেন। কারও স্বামী আবার অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত গোটা দিন। সময় দিতে পারছেন না স্ত্রীকে। ফলে দাম্পত্য জীবনে তৈরি হচ্ছে বিস্তর ‘ফাটল’! মুঠোফোনের সৌজন্যে সেই ‘ফাটল’ মেরামত করতে ঢুকে পড়ছে পরপুরুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত যুবক-তরুণদের ‘আকাশ কুসুম’ উপস্থাপনে বধূরা মজছেন, ভরসা করছেন! ‘ভার্চুয়াল’ বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে পৌঁছচ্ছে পরকীয়ায়। অন্যত্র ঘরবাঁধার সংকল্প নিয়ে বাড়ি ছাড়ছেন নতুন প্রেমিকের দেখানো স্বপ্নে বিভোর গৃহবধূরা। ‘স্ত্রী-হারা’ হচ্ছেন স্বামীরা! থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও, ‘নিখোঁজ ঘরণীরা’ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পুলিস জোরও খাটাতে পারছে না। উত্তর ২৪ পরগনার শুধু বারাসত পুলিস জেলাতেই এমন ঘটনার সংখ্যাটা চোখ কপালে ওঠার মতোই। নিখোঁজ হয়েছেন ৫০০ জন গৃহবধূ। শুধু গৃহবধূ নয়, ওই পুলিস জেলায় কিশোরী নিখোঁজের ঘটনার সংখ্যাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যদিও তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে বারাসত পুলিস জেলার প্রতিটি থানা। নিখোঁজদের উদ্ধার করতে অফিসাররা মরিয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোন নির্ভরতা, একদিকে যেমন সাইবার অপরাধের ফাঁদে ফেলছে মানুষকে, তেমনই বাড়াচ্ছে পরকীয়া সম্পর্ক। বারাসত পুলিস জেলার পরিসংখ্যান অবাক করে দিচ্ছে সকলকে। পুলিসের একটি বিশেষ সূত্রে খবর, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অসংখ্য নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়েছে এই পুলিস জেলার বিভিন্ন থানায়। গত পাঁচমাসে মোট ৫৩৬ জন যুবতী নিখোঁজ হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই গৃহবধূ! নিখোঁজের তালিকার বাকিরা অবিবাহিতা। গৃহবধূদের কেউ পালিয়েছেন স্বামীর পরিচিত কোনও ব্যবসায়ীর সঙ্গে, কেউ বা ঠিকাদার, আবার কেউ বা প্রতিষ্ঠিত কোনও যুবকের হাত ধরে। বধূদের অনেকের আবার সন্তানও আছে বাড়িতে। কারও বিয়ে হয়েছিল আড়াই বছর কারও বা তার চেয়েও বেশি। স্বামী, সন্তান সহ ভরা সংসার ছেড়েছেন তাঁরা!
যদিও থানা-পুলিস হওয়ার পর অনেক নিখোঁজ বধূ ও যুবতী বাড়ি ফিরেছেন। সংখ্যাটা সবমিলিয়ে প্রায় ২০০। পুলিসের ওই সূত্রটি বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বধূদের হদিশ পাওয়ার পরেও উদ্ধার করতে গেলে, তাঁরা ফিরতে চাইছেন না। স্পষ্ট বলছেন, ‘আমরা প্রাপ্তবয়স্ক। জীবনের ভালো আমরা নিজেরা বুঝে নেব।’ মূলত দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত বাড়ির মহিলারাই এতে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই স্বামীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে অফিসারদের কাছে কাতর আর্জিও জানাচ্ছেন। এপ্রসঙ্গে বারাসত পুলিস জেলার এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, ‘অভিযোগের পর প্রতিটি থানায় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিখোঁজদের উদ্ধার করছে। নিখোঁজ প্রাপ্তবয়স্কদের সিংহভাগই গৃহবধূ। তাঁদের উদ্ধার করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নিখোঁজ সিংহভাগ নাবালক বা নাবালিকাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’
পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচমাসে এই পুলিস জেলায় নাবালক নিখোঁজ হয়েছে ৩৩ জন। এর মধ্যে ২৫ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিস। নিখোঁজ হয়েছে ১৯৯ জন নাবালিকাও। তার মধ্যে প্রায় ১৭০ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিস।