প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে সুদ ছাড়া ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্র
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ঘরে বসেই মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে মিলবে লক্ষ লক্ষ টাকার লোন। সেক্ষেত্রে কোন সুদ দিতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক প্রতারণা চক্র। রয়েছে দ্রুত অ্যাপস ইনস্টল করার হাতছানি। সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা জালিয়াতি চক্রের নয়া ফাঁদ। তথ্য হাতিয়ে নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব করে নিতে পারে গ্রাহকের জমানো অর্থ। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, এর সঙ্গে সরকারি ঋণের কোনও ব্যাপার নেই। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে কারা যুক্ত, তা জানতে সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনটি অ্যাপস ঘুরপাক খাচ্ছে। একটিতে বিজ্ঞাপন হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করে যেখানে বাংলায় লেখা হয়েছে, একশো শতাংশ নিরাপদ। সিভিল প্রয়োজন নেই। কোনও সুদ ছাড়াই তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিন। মাসিক কিস্তি ১২৫০ টাকা। বাড়িতে বসেই এক ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদন। বিশদে জানতে অ্যাপস ডাউনলোডের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার অপরটিতে রয়েছে মাত্র পাঁচ মিনিটে ঋণ অনুমোদনের হাতছানি। সেক্ষেত্র সুদের হার ২.৫ শতাংশ সুদের হার। মেয়াদ ১২ থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত। আবেদন করতে অ্যাপস ডাউনলোড করতে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও জনপ্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার একটিতে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার নাম ও লোগো ব্যবহার করে ভর্তুকি যুক্ত তিন লক্ষ টাকার লোন দেওয়ার হাতছানি। বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছে, অফারটি রাত ১২টা পর্যন্ত বৈধ। আবেদন করতে অ্যাপস ইনস্টল করতে বলা হচ্ছে। কিস্তি মাস প্রতি ১৮৬০ টাকা করে। এবং এই সুযোগ প্রতিটি বর্ণের মানুষের জন্য যে ‘উপলব্ধ’, তা হাইলাইট করে লেখা হয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপসগুলো হচ্ছে প্রতারণার ফাঁদে প্রবেশের গেটওয়ে। বিজ্ঞাপনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে প্রথম দেখাতেই মনে হবে, সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন। তাতে ক্লিক বাটনও আছে। তাতে ক্লিক করলে অ্যাপস ইনস্টল করার অপশন দিচ্ছে। তারপর ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অ্যাপস নিজের মোবাইলে ইনস্টল করা উচিত নয়। রামপুরহাট সাইবার ক্রাইম থানার অফিসার সৌরদ্বীপ পাল বলেন, খোঁজখবর না নিয়ে অজানা অ্যাপস ডাউনলোড না করাই ভালো। এতে ফোন হ্যাক হওয়ায় সম্ভাবনা থেকে যায়। প্রতারণার ফাঁদেও পড়তে হতে পারে।
প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার করছে সাইবার অপরাধীরা। সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখে বিশ্বাস করে ফেলবেন যে, এটা সরকারি বিজ্ঞাপন। এভাবে সরকার থেকে ঋণ দেওয়া হয় না। আসলে সেই ছবির আড়ালেই রয়েছে প্রতারণার ফাঁদ। -নিজস্ব চিত্র