কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করতে চেষ্টার অন্ত ছিল না বিজেপির। সেই মতো ধর্মীয় তাস খেলতে পিছুপা হয়নি তারা। সাধু-সন্তদের এনে প্রচার করতেও দেখা গিয়েছে বিজেপি প্রার্থীকে। লক্ষ্য ছিল একটাই— কালীগঞ্জে উগ্র মেরুকরণ ক্লিক করলে সেটাই হবে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোট প্রচারের ‘মডেল’। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের সেই আশার গুড়ে বালি ফেলে দিয়েছেন কালীগঞ্জবাসী। নির্বাচনের ফলাফল দেখে এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে উপনির্বাচনে বিজেপির ভোট এক লপ্তে ভোট কমেছে দশ হাজারের বেশি। গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রায় ৬৪ হাজার ভোট পেয়েছিল কালীগঞ্জ বিধানসভা থেকে। উপনির্বাচনে বিজেপির ভোট ৫২ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবিরের বড় চিন্তার বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে তৃণমূলের। গতবারের চেয়েও অনেক লিডে জয়ী হয়েছেন ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী। কালীগঞ্জজুড়ে ব্যাপক উন্নয়নই শাসকদলের জয়ের ধারাকে অব্যাহত রাখল হলে রাজনৈতিক শিবিরের মত।
স্বাভাবিকভাবেই ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বসিত তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের বাংলায় মেরুকরণের রাজনীতি হালে পানি পাবে না। তাই বিজেপিকে বারবার পর্যদস্তু হতে হবে। সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিল কালীগঞ্জ। আমরা হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চায়েতেও লিড পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নেই তা সম্ভব হয়েছে।’
ফলাফল অনুযায়ী, উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রাপ্য ভোট ৫৫.১২ শতাংশ। বিজেপি পেয়েছে ২৮.২৮ শতাংশ ভোট। বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ১৫.২৪ শতাংশ ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনে ও বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাপ্য ভোট ছিল যথাক্রমে ৪৬.৮৫ শতাংশ এবং ৫৩.৩৫ শতাংশ অর্থাৎ, শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের ভোট অনেকটাই বেড়েছে। উপনির্বাচনে প্রদত্ত ভোট কম ছিল। তার পরেও তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার বৃদ্ধি ছাব্বিশের বিধানসভার আগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কালীগঞ্জের এই ফল তুলে ধরে রাজ্যজুড়ে প্রচার চালানোর অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছে শাসক শিবির।
কালীগঞ্জ বিধানসভার কালীগঞ্জ পঞ্চায়েতে গত লোকসভায় বিজেপি ৮০০’র বেশি ভোট লিড নিয়েছিল। এবার সেই পঞ্চায়েতেই তৃণমূল প্রায় ২ হাজার ৫০০ ভোট লিড নিয়েছে। কালীগঞ্জ বিধানসভার মধ্যে হিন্দু ভোটে সমৃদ্ধ কিছু পঞ্চায়েতে রয়েছে। সেগুলিতেও প্রত্যাশা মতো ফল পায়নি বিজেপি। যেমন, দেবগ্রাম পঞ্চায়েতে গত লোকসভায় তৃণমূল ৮০০ ভোটের লিড নিয়েছিল। সেখানে এবার লিড-মার্জিন ৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, মাটিয়ারি পঞ্চায়েতে গত লোকসভায় প্রায় ৫০০ ভোটে বিজেপি লিড নিয়েছিল। উপনির্বাচনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০০ ভোটে। যদিও ফরিদপুর পঞ্চায়েতে লোকসভা ও উপনির্বাচনে বিজেপি তাদের লিড ধরে রেখেছে। আবার গোবরা পঞ্চায়েতে ১ হাজার ৯৩ ভোট এগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু উপনির্বাচনে মাত্র ৬৭ ভোটে লিড পেয়েছে গেরুয়া শিবির। উপনির্বাচনে বিজেপির এই ফলাফল বাংলায় মেরুকরণ রাজনীতির পক্ষে বড় ধাক্কা বলেই বিশ্লেষকদের মত।
তবে, ভাঙলেও মচকাতে চাইছেন না বিজেপি প্রার্থী আশিষ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘হিন্দুদের ভোট অনেকটাই কম পড়েছে। তৃণমূলের সন্ত্রাসে অনেক হিন্দু মানুষ ভোট দিতে পারেননি।’ বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী কাবিল উদ্দিন শেখ বলেন, ‘বিজেপি নেতারা হিন্দু এলাকায় মেরুকরণের রাজনীতি করেছে। তাতে ভোট ভাগাভাগি হয়েছে। মুসলিম ভোট তৃণমূলের দিকে গিয়েছে।
আমরা ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের ভোট পেয়েছি।’ -নিজস্ব চিত্র