জেলার হাসপাতালে ভর্তি আটজন, বৃষ্টি শুরু হতেই ডেঙ্গুর উপদ্রব, আক্রান্ত ২০০
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: তীব্র দাবদাহের পর টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি মিলছে। তবে এই বৃষ্টির জলে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা, যা স্বাস্থ্যদপ্তরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এটাই আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও অন্যান্য বছরের তুলনায় এই সংখ্যা আশাপ্রদ বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে বর্ষা শুরুর সময় থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। জুনের শেষ থেকে ভালোভাবে বর্ষা নেমে যাবে। তার আগে সর্বত্র জঞ্জাল পরিষ্কার করতে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
প্রতিবছর মুর্শিদাবাদ জেলায় কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ধারাবাহিকভাবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এখন থেকে মাঝেমধ্যেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলি উপচে পড়ছে। ডাস্টবিন ও আবর্জনার স্তূপে জল জমছে। সেখানেই জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গুর মশা। বাড়ির আশপাশে যাতে জঞ্জাল না জমে এখন থেকেই সেদিকে সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, মুর্শিদাবাদে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২০০। তবে সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। আটজন ডেঙ্গু আক্রান্ত এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। দৈনিক প্রায় ৪০০জনের বেশি মানুষের নিয়মিত ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তবে জেলার ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যান ক্রমাগত বাড়বে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা। তাঁদের দাবি, এই জেলার বহু পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যের বাইরে কাজ করেন। তাঁরাও ভিন রাজ্য থেকে জ্বর ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে আসেন। তাই ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান অন্যান্য জেলার তুলনায় একটু বেশি হবে। প্রতিবছর বর্ষার মরশুমে এই রোগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গোটা রাজ্যের মধ্যে আক্রান্তের পরিসংখ্যানে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রথম দিকেই থাকে। এখন থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির পাশাপাশি পুরসভাগুলিকে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। খুব তাড়াতাড়ি বিভিন্ন জায়গায় গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে। বেশকিছু জায়গায় এখন থেকেই ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ। সাধারণত মশার কামড়ের ৩-১৪দিন পর উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গুর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বমিবমি ভাব, পেটে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া। ডেঙ্গু আক্রান্তদের যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। জ্বর নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যথা উপশমের জন্য প্যারাসিটামল খেতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দু’-সাতদিন পযন্ত স্থায়ী হতে পারে। আক্রান্ত রোগী ক্লান্তি, অস্থিরতা এবং বিরক্তিও অনুভব করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুরুতে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না।
ফলে অনেকের শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। কিন্তু, অন্যান্য ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি মশার কামড়ের চার-দশদিন পরে দেখা দিতে শুরু করে। যার কারণে রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। এতে শরীরে প্লেটলেট কমতে শুরু করে এবং রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। তাই আগেভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।