ভর্তির পোর্টাল চালুর পর এক সপ্তাহ পার, নজিরবিহীন পড়ুয়া সঙ্কটে বহু কলেজ
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ভর্তির অনলাইন পোর্টাল খোলার এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক নামী কলেজের কোথাও অর্ধেক, কোথাও তারও কম আবেদন জমা পড়ল। এবছর কলেজে ছাত্র সঙ্কট মারাত্মক আকার নিতে চলেছে বলে প্রিন্সিপালদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
কলেজে অনলাইন ভর্তির পোর্টাল চালুর পর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ভর্তি হতে ইচ্ছুক অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এই সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করে ফেলেছেন। একচেটিয়া কলেজে মোট আসনের ধারেকাছেও আবেদন জমা পড়েনি। আবার, সকল আবেদনকারী ওই কলেজেই ভর্তি হবেন, এমন গ্যারান্টিও নেই। কারণ, একজন পড়ুয়া ভর্তির জন্য অনলাইনে একাধিক কলেজে আবেদন করেন।
যোগদা সৎসঙ্গ পালপাড়া মহাবিদ্যালয়ে অনার্স ও জেনারেল মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ১৫৫৬টি। গত ১৮ জুন অনলাইনে ভর্তির পোর্টাল খুলেছে। সোমবার পর্যন্ত ৩০০টি আবেদন জমা পড়েছে। আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও আবেদন করা যাবে। ওই কলেজের প্রিন্সিপাল প্রদীপ্তকুমার মিশ্র বলেন, সাধারণ কোর্স নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ কমছে। তাই এতো কম আবেদন। এর চেয়েও চিন্তার বিষয় হল, ড্রপ আউট। আমাদের কলেজে ষষ্ঠ সেমেস্টারে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৩২ জন। অথচ, ওই ব্যাচে মোট ৮৩৩জন ভর্তি হয়েছিলেন। অর্থাৎ একটা ব্যাচের ৫০০ ছাত্রছাত্রী ড্রপ আউট। মোট পড়ুয়ার ৭৬ শতাংশই ছাত্রী। বাকি ৩৩ শতাংশ ছাত্র। কন্যাশ্রীর(কে-টু) ফর্ম পূরণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই ছাত্রীদের অনেকে কলেজে আসা ছেড়ে দিচ্ছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের নামী কলেজগুলির মধ্যে অন্যতম কাঁথি পিকে কলেজ। এখানে অনার্স ও জেনারেল কোর্সে মোট আসন সংখ্যা চার হাজার। ভর্তির জন্য এপর্যন্ত অনলাইনে আবেদন এসেছে মাত্র আড়াই হাজার। ওই কলেজের প্রিন্সিপাল অমিতকুমার দে বলেন, আগে ১৬-১৭ হাজার আবেদন জমা পড়ত। এবার পরিস্থিতি খুব খারাপ। এক সপ্তাহ শেষে আবেদন আড়াই হাজার। শেষপর্যন্ত কী হবে, জানি না।
পূর্ব মেদিনীপুরের আর একটি নামী কলেজ মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়। একসময় এই কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে বিধায়ক, নেতাদের সুপারিশ নেওয়ার জন্য লাইন পড়ে যেত। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা ওই কলেজে ভর্তি হতেন। এবার সেই কলেজে ১৮ জুন থেকে সোমবার পর্যন্ত অনলাইনে মোট ১৩০০ আবেদন জমা পড়েছে। প্রিন্সিপাল স্বপনকুমার মিশ্র বলেন, গত তিন-চার বছর ধরে দেখছি, আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে। এবারও সেই ছবির কোনও বদল হবে বলে মনে হচ্ছে না।
জেলা সদর তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে অনার্স ও জেনারেল মিলিয়ে মোট আড়াই হাজার আসন রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ২২০০ আবেদন জমা পড়েছে। গত তিন-চার বছর ধরে এখানে বহু অনার্সের সিট ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা থেকে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাসের মতো বিষয়ে মোট আসনের ধারেকাছেও ছাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এবারও সেই ছবির বিশেষ হেরফের হওয়ার ইঙ্গিত নেই।
শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে জটিলতা, জেনারেল কোর্সে পড়াশোনা করার পর কর্মসংস্থানের সঙ্কট সহ নানা কারণে কলেজে ভর্তির হার একেবারে কমে গিয়েছে। উচ্চশিক্ষায় ছাত্রসঙ্কট দেখা দিচ্ছে। ক্লাসরুম আর ভরছে না। যত সময় যাচ্ছে, এই সমস্যা আরও বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের মতো শিক্ষায় এগিয়ে থাকা জেলাতেও এই সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।