• মিটারে কারচুপি, দেদার চলছে বিদ্যুৎ চুরি, জেলায় ১২ উপভোক্তার বিরুদ্ধে এফআইআর
    বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: জেল ও জরিমানার ভয় দেখিয়েও আটকানো যাচ্ছে না। ফলে বীরভূম জেলাজুড়ে দেদারে বিদ্যুৎ চুরি চলছে। এই চুরির পিছনে সক্রিয় বড় একটা চক্র! একাধিক বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই জেলা বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকরা এমনটাই আশঙ্কা করছেন। বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১২টি বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মিটার ট্যাম্পারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, সুকৌশলে মিটারের ভিতরে থাকা দ্বিধাতু পাতে পয়েন্ট অব লোকেশন বদলে দেওয়া হচ্ছে। ফলত খরচ হওয়া বিদ্যুতের তুলনায় মিটার রিডিং অনেকটাই কম হচ্ছে। মূলত উপভোক্তাদের একাংশ গ্যাঁটের কড়ি বাঁচাতেই এই অসাধু পথ অবলম্বন করছে। ঘটনায় বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে নির্দিষ্ট উপভোক্তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে উপভোক্তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে। 

    এবিষয়ে জেলা বিদ্যুৎ দপ্তরের রিজিওনাল ম্যানেজার পরিমল সরকার বলেন, বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা প্রায়শই নজরে আসছে। প্রতিক্ষেত্রেই আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতিমধ্যে ১২ জন উপভোক্তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে উপভোক্তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চুরি রুখতে আমরা জেলাজুড়ে কড়া নজরদারি চালাচ্ছি। আমাদের আশঙ্কা, এই বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় বড় একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। পুলিসের সহযোগিতায় সেই চক্রের মাথাকে খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে। 

    জেলাজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ঘাটতি মেটাতে দপ্তরের তরফে জেলাজুড়ে নতুন করে একাধিক ট্রান্সফর্মার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে জেলার সিউড়ি, রামপুরহাট ও বোলপুর ডিভিশনে দশের অধিক সাব-স্টেশন তৈরির ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর পথ হাঁটতে শুরু করেছে। তবে, এরই মাঝে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকায় কার্যত দপ্তরের কর্তাদের ঘুম উড়েছে। দপ্তরের তরফে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে, জেলার ইলামবাজারে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা সব থেকে বেশি ঘটছে। ইতিমধ্যে ইলামবাজারে পৃথক ছ’টি বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা সামনে এসেছে। এছাড়াও জেলার দুবরাজপুর ও লাভপুরেও বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটছে। পৃথক দু’টি জায়গায় মাত্র দু’মাসে তিনটি করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা দপ্তরের নজরে এসেছে। পৃথক ১২টি ঘটনায় ইতিমধ্যে দপ্তরের তরফে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে উপভোক্তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে। 

    দপ্তরের তরফে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় মোট ৩১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করা সম্ভব হয়েছে। দপ্তর সূত্রে খবর, বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উপভোক্তাদের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। জরিমানা পরিশোধ করে নতুন করে আবেদন করলে ফের নির্দিষ্ট উপভোক্তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়। দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বড় কোনও চক্র সক্রিয় না থাকলে এভাবে মিটার ট্যাম্পার করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা ঘটতে পারে না। সেক্ষেত্রে এখন বিদ্যুৎ চুরি রুখতে চক্রের মাথার খোঁজ শুরু হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)