ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি, ফুঁসছে ব্রাহ্মণী নদী, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামের পর গ্রাম
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দিনকয়েকের টানা বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়েছে ব্রাহ্মণী নদীর। ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় বৈধরা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে। যার জেরে সোমবার দুপুর থেকে নলহাটি-১ ব্লকের একাধিক কজওয়ে চলে গিয়েছে জলের তলায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দু’পাড়ের মানুষ। এরই মধ্যে আবহওয়া দপ্তরের ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে চিন্তা বাড়ছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের। বিপদের আশঙ্কা থেকে কজওয়েগুলিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গৃহবন্দি অবস্থা এলাকার বাসিন্দাদের।
ঝাড়খণ্ড থেকে নলহাটির উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ব্রাহ্মণী নদী। ঝাড়খণ্ড ও নলহাটি সীমানায় বৈধরা গ্রামে ব্যারাজ রয়েছে। এমনিতেই দিনকয়েকের বৃষ্টিতে নদীর জলস্তর বাড়ছিল। এরইমধ্যে ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় বৈধরা ব্যারাজে চাপ বাড়ছিল। এদিন সকাল থেকে ব্যারাজের চারটি গেট থেকে জল ছাড়া শুরু হতেই কজওয়েগুলি জলের তলায় চলে গিয়েছে। নলহাটি-১ ব্লকের ব্রাহ্মণী নদীতে সোনারকুণ্ডু, ভগবতীপুর, ঝাড়পাড়া ও দেবগ্রামের কাছে কজওয়ে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে দেবগ্রাম কজওয়েতে। এই কজওয়ে দিয়ে মুর্শিদাবাদ, নলহাটি ও রামপুরহাটের মধ্যে বহু যানবাহন চলাচল করে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
জানা গিয়েছে, নলহাটির রামেশ্বরপুর, বুজুং, সরধা, রামপুর সহ প্রায় ২০টি গ্রামকে ঘিরে রেখেছে ব্রাহ্মণী নদী। বাসিন্দাদের নলহাটি শহর, রামপুরহাট বা মুর্শিদাবাদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদীর কজওয়ে। নদীর অন্য পাড়ে দেবগ্রাম, ভদ্রপুর, রায়পুর, কৃষ্ণপুর সহ প্রায় ৩০টির বেশি গ্রামের বাসিন্দাদের দ্রুত রামপুরহাট মেডিক্যাল, তারাপীঠ ও মহকুমাশহরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমও সেই কজওয়ে। যদিও যোগাযোগের অন্যতম রানিগঞ্জ- মোড়গ্রাম ১৪নম্বর জাতীয় সড়ক রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত গ্রামের মানুষদের কাছে সেটি অনেকটাই ঘুরপথ। এলাকার বাসিন্দা হলধর মণ্ডল, শ্রীনিবাস মণ্ডল বলেন, জাতীয় সড়কে যানজট হলে এই কজওয়ের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কজওয়ে। তাই দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্রিজের দাবি জানানো হলেও আজও হয়নি। এই ব্রিজ হলে নদীর দু’পারের মানুষের রামপুরহাট সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব প্রায় ১২ কিমি কমে আসবে। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি ঘটবে। তেমনই বর্ষায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হবে না দুপারের মানুষকে।
এদিন দুপুর থেকে এই ঘাটে নৌকায় পারাপার শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অতিরিক্ত যাত্রী চাপিয়ে চলেছিল পারপার। যার ফলে এই ঘাটে যাত্রীবোঝাই নৌকা ডুবে যায়। বিডিও সৌরভ মেহেতা বলেন, দেবগ্রামের কজওয়েটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নদীর জলস্তর বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেললে নৌকা বন্ধ করে দেওয়া হবে। নদীর জলস্তর হু হু করে বাড়ায় বন্যার আশঙ্কায় রাতের ঘুম উবেছে নদীর তীরের বাসিন্দাদের। নলহাটি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আশাদুজ্জামান বলেন, এখানে বৃষ্টিতে কোনও ক্ষতি হয় না। ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টি হলেই আমাদের চিন্তা বাড়ে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। আমরা সবরকমভাবে প্রস্তত রয়েছি।