দম্পতির ঝুঁকি নিয়ে করা ভিডিও দেখেই এটিএম লুট কাণ্ডে দুষ্কৃতীদের গাড়ি চিহ্নিত
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ১৩ জুন রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। ময়নাগুড়ির বোলবাড়িতে জোড়া এটিএম থেকে মুখ ঢাকা কয়েকজনকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে দেখেই দানা বেঁধেছিল সন্দেহ। তারপর আগুপিছু না ভেবে নিজেদের গাড়ি ঘুরিয়ে ওই গাড়ির পিছু নিয়েছিলেন ময়নাগুড়ির আমগুড়ির বাসিন্দা রাজু রায়। হাইওয়েতে উঠতেই গতি বেড়ে যায় সন্দেহজনক গাড়িটির। তা দেখে পাশের সিটে বসা স্ত্রী সুপর্ণাকে মোবাইলে ওই গাড়ির ভিডিও করতে বলেন রাজু। সেই সঙ্গে ১০০ ডায়ালে ফোন করে পুলিসকে বিষয়টি জানান তাঁরা। সন্দেহজনক গাড়ির পিছু ধাওয়া করে জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ে আসার পর জাতীয় সড়কে পুলিস দেখতে পান রাজু। বিষয়টি তাদের জানিয়ে মোবাইলে রেকর্ড করা সন্দেহজনক গাড়ির ভিডিও পুলিসের হাতে তুলে দেন তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দম্পতির করা ওই ভিডিও এটিএম লুট কাণ্ডে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের গাড়ি চিহ্নিত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে পুলিসকে। একারণে সোমবার ওই দম্পতি সহ শ্রেয়া দে নামে তাঁদের এক আত্মীয়কে এদিন সংবর্ধিত করেন জলপাইগুড়ির পুলিস সুপার খণ্ডবাহালে উমেশ গণপত।
তাঁরা তিনজন ওই রাতে নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে যেভাবে দুষ্কৃতীদের গাড়ির পিছু ধাওয়া করেছিলেন, তার প্রশংসা করেন পুলিস সুপার। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যদি এভাবে পুলিসের পাশে এসে দাঁড়ান, অপরাধ দমন অনেক সহজ হয়ে যায়।
ময়নাগুড়ির এটিএম লুট কাণ্ডে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চার দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার এবং টাকা উদ্ধারের সাফল্যে পুলিসকর্মীদেরও সংবর্ধনা জানানো হয় এদিন। ব্যাঙ্কে বিমার কাজ করা রাজু রায় বলেন, সপরিবারে আমরা গাড়িতে লাটাগুড়ি যাচ্ছিলাম। গাড়িতে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এবং আমার এক বোন ছিল। বোলবাড়িতে আচমকা নজরে পড়ে, মুখ ঢাকা কয়েকজন এটিএম থেকে বেরিয়ে সাদা রঙের একটা গাড়িতে উঠছে। এটা দেখেই সন্দেহ হয়। গাড়ি ঘুরিয়ে পিছু ধাওয়া করি। তাঁর দাবি, হাইওয়েতে উঠতেই সন্দেহজনক গাড়িটির গতি বেড়ে যায়। এরপরই স্ত্রীকে ওই গাড়ির ভিডিও রেকর্ডিং করতে বলি। সেইসঙ্গে ১০০ ডায়ালে ফোন করে সন্দেহের বিষয়টি জানাই।
রাজুর স্ত্রী সুপর্ণা বিশ্বাস বলেন, গাড়িটির পিছু নিতে গিয়ে ভয় লাগছিল। শুধু মনে হচ্ছিল, ওই গাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা যদি আমাদের দিকে তাক করে গুলি চালায়, সেক্ষেত্রে কী হবে! কিন্তু পরিণতি না ভেবে গাড়িটি ধরার চেষ্টা চালিয়েছি।
পুলিস সুপারের দাবি, এটিএম লুটে অভিযুক্ত ভিনরাজ্যের ওই দুষ্কৃতীদের হাইওয়ে ধরে গাড়ি নিয়ে পালানোর ছক ছিল। কিন্তু দ্রুত পুলিস খবর পেয়ে যাওয়ায় হাইওয়েতে নাকা চেকিং শুরু হয়ে যায়। ধৃতরা জেরায় স্বীকার করেছে, হাইওয়েতে পুলিসের চেকিং দেখেই তারা গ্রামের রাস্তা ধরে। গজলডোবার ক্যানেল রোড ধরে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়।
এসপি’র দাবি, এটিএম লুটে পাঁচজন ছিল। এর মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। জঙ্গলে তল্লাশি চালানো কঠিন ছিল। শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের পাশাপাশি বনদপ্তরের বিশেষ সহযোগিতা মিলেছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে ড্রোন ওড়ানো হয়েছিল। - নিজস্ব চিত্র।