প্রসূতি মৃত্যু: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, তদন্ত শুরু স্বাস্থ্যদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের
বর্তমান | ২৪ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: কালিয়াচকের পর এবার ইংলিশবাজার। ফের কাঠগড়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা ওঠে তসলিমা খাতুনের (২২)। পরিবারের লোকেরা তাঁকে ভর্তি করেন একটি নার্সিংহোমে। সাড়ে তিনঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে রোগীকে রেফার করতে হচ্ছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরিবারের সদস্যরা মেডিক্যালে ছুটে গেলে তাঁদের জানানো হয়, প্রসূতিকে কার্যত মৃত অবস্থায় মেডিক্যালে আনা হয়েছে। এখন প্রশ্ন, সাড়ে তিনঘণ্টার মধ্যে এমন কী হল যে প্রসূতিকে বাঁচানো গেল না?
সোমবার দুপুরে জেলাশাসকের অফিসে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ জানান মৃতার স্বামী শেখ হাদিবুল। খবর পাওয়া মাত্রই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নার্সিংহোম পরিদর্শনে যায় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি দল।
মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া বলেন, আমাদের টিমকে সঙ্গে সঙ্গে নার্সিংহোমে পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছে। যার গাফিলতি পাওয়া যাবে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার মালদহ মেডিক্যালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। মৃতার স্বামীর কথায়, রবিবার সকালে স্ত্রীর পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। একই সঙ্গে প্রসব যন্ত্রণাও ছিল। সময় নষ্ট না করে তাঁকে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রেট ঠিক হওয়ার পর দুপুর দু’টো নাগাদ সেখান থেকে ফোন আসে। জানানো হয় রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কিছু হয়নি। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই মেডিক্যাল কলেজ থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনে। তারা বধূকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে স্বামী সহ বাকিদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যেতে বলে। সেখানে গেলে ডাক্তারবাবু জানান বধূ আগেই মারা গিয়েছেন।
বধূর স্বামী বলেন, নার্সিংহোমেই আমার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। কারণ ওর হাত, পা সব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।
মৃতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আশায় ছিলাম বাড়িতে নতুন অতিথি আসতে চলেছে। পরিবারের নতুন সদস্যকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।
এদিকে, সোমবার বিকেলে রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবার, পরিজনেরা। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ নিয়ে ফের নার্সিংহোমের সামনে পৌঁছয় মৃতার পরিবার। ওই নার্সিংহোমের বাইরে ভিড় করে কয়েকশো মানুষ।
ঠিক সেই পরিস্থিতির মধ্যেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছিলেন জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি দলের সদস্যরা। বাইরের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে খবর দেওয়া হয় প্রশাসন ও পুলিসকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইংলিশবাজার থানা ও মিল্কি ফাঁড়ির বিশাল পুলিস বাহিনী। তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়।