গভীর নলকূপ দেখিয়ে স্ত্রী বললেন, 'ওখানে রয়েছে', প্রায় দেড় মাস পর যুবকের দেহ উদ্ধার ...
আজকাল | ২৪ জুন ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: স্বামীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল স্ত্রী সহ চারজনকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল নিখোঁজ যুবকের স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালক ও শ্যালিকার স্বামীকে। সোমবার ভোররাতে গভীর নলকূপ থেকে নিখোঁজ যুবকের কঙ্কাল সার দেহ উদ্ধার করল পুলিশ।
মৃত যুবকের নাম রবীন রুই দাস (৩৬)। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানার রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কানাইপুর এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চন্ডীতলা থানার জঙ্গলপাড়া গ্ৰামের বাসিন্দা রবীন রুই দাসের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জাঙ্গিপাড়ার কানাইপুর গ্ৰামের অপর্ণা রুই দাসের। সাংসারিক অশান্তি ছিল। তাই স্ত্রী অপর্ণা দাস গত কয়েক বছর শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।
পরিবারের এক সদস্যের দাবি, রবীনের স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাই নিয়ে অশান্তি চলত। তবে কয়েক বছর ধরে শ্বশুরবাড়িতে যাতায়াত ছিল রবীন রুই দাসের। ৪০ দিন আগে রবীন জঙ্গলপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। বলেছিলেন, শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
পরিবারের তরফে জাঙ্গিপাড়া থানায় নিখোঁজ ডাইরি করা হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে রবীনের স্ত্রী এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্দেহ হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, রবীনকে খুন করা হয়েছে। এবং ওই খুনের সঙ্গে যুক্ত তাঁর স্ত্রী অপর্ণা। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে খুনের পর দেহ লোপাটের তথ্যও। তদন্তে পুলিশ খোঁজ পায় জাঙ্গিপাড়ার কানাইপুর এলাকার কৃষি জমি সংলগ্ন সেচের জন্য বসানো গভীর নলকূপে দেহ লোপাট করা হয়েছে। দেহ লোপাটের ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনও যুক্ত।
রবীনের স্ত্রী সহ শ্বশুর জয়দেব রুই দাস, শ্যালক অভিজিৎ রুই দাস ও শ্যালিকার স্বামী প্রদীপ পাত্রকে রবিবার গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে রবিবার রাত থেকে দেহ উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে পুলিশ। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর সোমবার ভোর রাতে নলকূপ থেকে একটি কঙ্কাল সার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা জেরায় খুন এবং দেহ লোপাটের অভিযোগ স্বীকার করে। সেই অনুযায়ী অভিযুক্তদের নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের পাশাপাশি মৃতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ টেস্ট ও আনুষঙ্গিক একাধিক পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সোমবার জাঙ্গিপাড়ায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষানু রায় জানিয়েছেন, চন্ডীতলার যুবক রবীন রুই দাস নিখোঁজের অভিযোগ হয় ১৩ মে। এরপর গত ২২ জুন রবীন রুই দাসের দাদা বাবলু রুই দাস জাঙ্গিপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন রবীন রুই দাসকে তাঁর স্ত্রী ও তাঁর বাড়ির লোকজন খুন করে কোথাও ফেলে দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে। এরপর ২২ তারিখ খুনের ঘটনার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্তরা। তারপর গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার গভীর রাতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নলকূপের ভিতর থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি মৃতদেহের ফরেন্সিক পরীক্ষা এবং তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে।ছবি পার্থ রাহা।