• অভিষেকের পঞ্চবাণে বিজেপি বিপাকে
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৩ জুন ২০২৫
  • পহেলগাম কাণ্ডের পর পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার দুই সংসদের সদস্যদের ভাগ করে বিদেশ সফরে পাঠিয়েছিলেন। এমপি’দের মধ্যে ভারতের হয়ে ব্যাটিং করার ব্যাপারে দু’জনের নাম ভীষণভাবে চর্চায় উঠে এসেছে। তাঁরা হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শশী থারুর। ভারতের বীর সেনাবাহিনী কোন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছে তা সাংসদরা বুঝিয়ে বলেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশের সেখানকার সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনকে। পড়শি দেশ জঙ্গিদের কীরকম নিরাপদ ঘাঁটি হয়ে উঠেছে, তাও সংসদীয় প্রতিনিধি দল খোলসা করে দিয়েছেন। এককথায়, পাকিস্তানের জঙ্গিপনার মুখোশ খুলে দিতে অভিষেকের মতো প্রতিনিধিরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি।

    একটা জিনিস বলা দরকার, যে দুই সাংসদকে নিয়ে আলোচনা করছি, তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থানে কিন্তু পার্থক্য আছে। অভিষেক এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির দুশমন হিসাবে পরিচিত। সঙ্গীর দল কংগ্রেসও অবশ্য গেরুয়া-বিরোধী বলেই নিজেদের মনে করে।তবে সঙ্গীর বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। কংগ্রেসের মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিণের এই সাংসদ নাকি বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে আছেন!

    পহেলগাম কাণ্ডের ৫৫ দিন পর এমন পঞ্চবাণ অভিষেক ছুঁড়েছেন যে, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল বেজায় বিপাকে পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ডায়মন্ড হারবারের এমপি’র তোলা পাঁচ প্রশ্নের যুতসই জবাব মোদিজীর কাছে আছে বলে মনে হয় না। অভিষেক জানতে চেয়েছেন, কাশ্মীরে সীমান্ত পেরিয়ে যারা এসে ভারতীয় ২৬ জন পর্যটককে দিবালোকে নৃশংস হত্যা করে চলে গেল, এ দিনেও তাদের চিহ্নিত করে ধরা গেল না কেন? এতবড় ঘটনা যে ঘটবে তার বিন্দুবিসর্গ আভাস কেন দেশের গোয়েন্দা বিভাগ দিতে পারল না? কিসের স্বার্থে সেই ব্যর্থ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হল? এ তো ব্যর্থতার পুরস্কার। তাছাড়া, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রতিপক্ষকে বাগে পেয়েও কেন ছেড়ে দেওয়া হল? পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে যুদ্ধ-মেটানোর দাবি তুলেছেন, সেই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। কিন্তু কেন?

    এইসব প্রশ্ন কেবল অভিষেকের একার নয়, গোটা দেশবাসীর। সবাই জানতে চায়, পঞ্চবাণের জবাবে মোদিজী কী বলছেন? যুদ্ধ থামতে না থামতেই নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ ঢাক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। ’সিঁদুর অপারেশন’ যেন বিজেপির ক্যাডাররাই করেছেন, প্রচারে এমনভাবেই তাঁরা বলে বেড়াচ্ছেন। যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদী-শাহের এই বিভ্রান্তিকর প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি রে রে করে উঠেছে। যখন অভিষেকের মতো সর্বদলীয় সাংসদরা দলমত নির্বিশেষে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে পহেলগাঁ কাণ্ডে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করছে, তখন মোদীজি বাংলায় এসে মমতাকে ‘সিঁদুর অপারেশন’-এর বিরোধী বলে জনসভায় দাঁড়িয়ে সমালোচনা করছেন। কতটা নির্লজ্জ রাজনৈতিক স্বার্থ থাকলে প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন ব্যক্তি এরকম কাজ করতে পারেন?

    অভিষেক পঞ্চবাণের পাশাপাশি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশের বিচার বিভাগ, মিডিয়া এবং প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়েও। তারা কেন এইসব প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে রাখছেন না, অভিষেকের বিস্ময় সেখানেই। আসলে দেশের রাজনীতিতে গঠনমূলক সমালোচনার বড় অভাব। সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন তরুণতুর্কি অভিষেক।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)