এসএসসির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ফের মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে। সোমবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। এর আগেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীদের দাবি ছিল, এসএসসির ২০২৫-এর নতুন বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। বিজ্ঞপ্তির একাধিক বিষয় বৈষম্যমূলক ও আপত্তিকর বলে অভিযোগ করেন মামলাকারীদের আইনজীবী।
সোমবার জরুরি ভিত্তিতে নতুন মামলার শুনানির জন্য আবেদন করা হয়। আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র ও আইনজীবী শামিম আহমেদ এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল শুধুমাত্র ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকরাই নতুন করে পরীক্ষায় বসতে পারবেন। পাশাপাশি বয়সে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন নতুন যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে ‘টেন্টেড’ (অযোগ্য)-রাও পরীক্ষায় বসতে পারবেন।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘এর ব্যাখ্যা একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই দিতে পারবে। মূল নির্দেশও সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছিল।’ আগামী ১ জুলাই মামলাটির শুনানির আশ্বাস দিয়েছেন বিচারপতি।
এর আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার শুনানিতে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অনেক বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তির অনুরূপ নয়। নতুন এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিয়ম বদল হলে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের সুযোগ আরও কমে যাবে।’ এরপর বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসএসসির নতুন বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত বিষয়ে এখনই হস্তক্ষেপ করবে না হাইকোর্ট।
চলতি বছর এপ্রিলের শুরুতে ২০১৬ সালে এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত গোটা প্যানেলটি ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি রাতারাতি বাতিল হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে এসএসসি। গত মাসের শেষেই ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের জন্য নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসএসসি। পরীক্ষার বিধিতেও নানা বদল আনা হয়।
এসএসসির প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে মোট শূন্যপদ রয়েছে ৩৫৭২৬টি। এর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের শূন্যপদ ২৩২১২। একাদশ-দ্বাদশের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ১২৫১৪। নয়া বিধি অনুসারে, জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং ক্লাস নেওয়ার দক্ষতার উপর। ১৬ জুন থেকে অনলাইনে আবেদন শুরু হয়েছে, ১৪ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ১৪ জুলাই রাত ১২টার আগে পরীক্ষায় বসার ফি জমা দিতে হবে।
নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরের। এটি আগে ৫৫ নম্বর ছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার উপরে থাকবে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। আগে এটি ছিল ৩৫ নম্বর। ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নম্বর অপরিবর্তিত থাকছে। এই ক্ষেত্রে আগে ১০ নম্বর ছিল, নতুন নিয়োগ বিধিতেও তা-ই রাখা হয়েছে। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার উপর দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর। এ ছাড়া ‘লেকচার ডেমনস্ট্রেশন’-এর জন্যও সর্বোচ্চ ১০ নম্বর রাখা হচ্ছে।