• খরিদ্দার ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, নেহরু'ও, কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন আতরের গন্ধে ইতিহাসের সুরভি আজও বহমান...
    আজকাল | ২৩ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন চিতপুর ও জাকারিয়া স্ট্রিটের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধে ছড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক গন্ধ—আতরের গন্ধ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানকার আতরের বাজার রাজসিক ঐতিহ্য বহন করে চলেছে, যা ব্রিটিশ আমল থেকেই সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আকৃষ্ট করে এসেছে।

    ১৮২৪ সালে লখনউ থেকে কলকাতায় আসেন শেখ জান মহম্মদ ও হাজি খোদা বখ্‌শ নবী বখ্‌শ। সেসময় লখনউ ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতায় আক্রান্ত। সেই প্রেক্ষাপটেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন কলকাতার বেলেঘাটায় এবং ব্যবসার জন্য দোকান কেনেন মৌলানা শওকত আলি লেনে। আজও সেখানেই চলছে ঐতিহ্যবাহী আতরের দোকান, যার বর্তমান উত্তরাধিকারী নিয়াজউদ্দিন আল্লা বখ্‌শ ও তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র।

    এই আতরের দোকানে রয়েছে শতাধিক প্রাকৃতিক সুগন্ধিযুক্ত আতর—ফিরদৌসি, শাহী, গুলাব, হায়াতি, শমা, বেলি প্রভৃতি নামের আতর কাঁচের ঝকঝকে বোতলে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩০,০০০ দামে। কেবল কলকাতা নয়, এই আতর রফতানি হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও।

    আকর্ষণীয় তথ্য হল, এই দোকানের আতরের গন্ধে মুগ্ধ হয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জওহরলাল নেহরুর মতো ব্যক্তিত্বরা। নিয়াজউদ্দিন জানান, “দাদুর মুখে শুনেছি, চল্লিশের দশকে নেতাজি ও নেহরু এই দোকানে এসে আতর কিনতেন।”

    আতরের উৎপত্তি শব্দ 'ইতর', যার অর্থ সুগন্ধি। এটি সাধারণত ফুল, মসলা, গাছের ছাল থেকে জলীয় বা ভাপীয় পাতন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। বাংলা সাহিত্যে বাবু সংস্কৃতির অংশ হিসেবে আতরের গন্ধের বহু উল্লেখ পাওয়া যায়। আজকের প্রজন্মও আতরের প্রতি সমানভাবে আকৃষ্ট—ঈদ, দুর্গাপুজো কিংবা দৈনন্দিন ব্যবহারে এই সুগন্ধির কদর সর্বত্র।

    নিয়াজউদ্দিনের কথায়, “সুগন্ধির কোনও ধর্ম হয় না। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান—সকলেই এখানে আসেন। আতর আমাদের ঐক্যের সুগন্ধ।”
  • Link to this news (আজকাল)