• ইন্টারনেটের সাহায্যে আঙুর আকৃতির টম্যাটো চাষ
    এই সময় | ২৩ জুন ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    আকৃতি অনেকটা আঙুরের মতো। কিন্তু আসলে টম্যাটো। রং টকটকে লাল। তবে কমলা, হলুদ রংয়েরও আছে। সুস্বাদু। মূলত থাইল্যান্ডের পাহাড়ি অঞ্চলে এই ধরনের টম্যাটোর দেখা মেলে।

    এখন প্রশ্ন করতেই পারেন, এই টম্যাটোর স্বাদ আস্বাদনের জন্য উড়ানের টিকিট কেটে সুদূর থাইল্যান্ডে যেতে হবে? আজ্ঞে না। বাড়ি যদি মালদায় হয়, তা হলে পোয়াবারো। না হলেও ক্ষতি নেই, উত্তরবঙ্গের যে কোনও প্রান্তে বসেই পাওয়া যাবে থাইল্যান্ড প্রজাতির এই টম্যাটো।

    পুরাতন মালদায় এই প্রজাতির টম্যাটো চাষ করে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন পুরাতন মালদা ব্লকের মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুরের বাসিন্দা মনোতোষ রাজবংশী।

    এই টম্যাটো চাষ শেখার জন্য তাঁকে ছুটতে হয়নি কোনও শিক্ষাকেন্দ্রে। কলেজের পাট চুকিয়ে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে কামাল করে দিয়েছেন বছর ৩৬-এর এই যুবক।

    চিকিৎসক থেকে উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিক, সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, এই টম্যাটোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। হাই সুগার, হৃদরোগ এমনকী, ক্যান্সারের মতো ব্যাধি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও আঙুর আকৃতির এই টম্যাটো বেশ কার্যকরী।

    আর তাই দেশ-বিদেশে থাইল্যান্ড প্রজাতির এই টম্যাটোর চাহিদা আকাশছোঁয়া। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এক সময়ে কাজ শুরু করেছিলেন মনোতোষ। বর্তমানে বাংলার পাহাড়ি অঞ্চল, সিকিম, অসম সব উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে এই টম্যাটো। পাইকাররা মনোতোষের কাছে এসে বস্তা ভর্তি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

    এই যুবকের চাষবাসে আগ্রহ পরিবার সূত্রেই। মনোতোষের পারিবারিক ব্যবসা চারাগাছ বিক্রি। মনোতোষ বলেন, ‘বাড়ির পাশে এক বিঘা ফাঁকা জমিতে পলি হাউজ় তৈরি করি। প্রথমে সেখানেই ব্রকোলি, কালার ক্যাপসিকাম উৎপাদন শুরু করি। এক সময়ে মনে হলো, নতুন কিছু করা যায় না?

    তারপরেই ইন্টারনেট ঘেঁটে থাইল্যান্ডের টম্যাটোর হদিশ পাই। শিলিগুড়ির এক কৃষকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টম্যাটোর বীজ সংগ্রহ করি। গত বছর ডিসেম্বরে ১০ কাঠা জমিতে শুরু হয় এই প্রজাতির টম্যাটোর চাষ। এখন ফলন ধরেছে। ফলন কী ভাবে বাড়ানো যায় সেই চেষ্টায় আছি।’ এলাকায় যাঁদের চাষে আগ্রহ আছে, তাঁদের পরামর্শও দিচ্ছেন মনোতোষ।

    উদ্যান পালন দপ্তরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েকের কথায়, ‘মালদা আম, লিচুর জন্য বিখ্যাত। তবে আঙুর আকৃতির এই টম্যাটো চাষ এখানে সম্ভবত প্রথম। উত্তর-পূর্ব ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মূলত হোটেল, রেস্তোরাঁয় এই ধরনের টম্যাটো বেশি পাওয়া যায়।’

    তবে এই টম্যাটোর দাম অনেক বেশি। মালদায় ভবিষ্যতে এর উৎপাদন বাড়লে অনেক তরুণ-তরুণী স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারেন বলে মনে করছেন মনোতোষ, সামন্ত দু'জনেই। এমনকী, চাষবাস থেকে মুখ ফিরিয়ে যাঁরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে চাইছেন, তাঁদের জন্যও মনোতোষের এই উদ্যোগ 'গেম চেঞ্জার' হতে পারে।

  • Link to this news (এই সময়)