এই সময়: ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে দলের কিছু নেতার আলটপকা মন্তব্যে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের। পশ্চিম এশিয়ায় অশান্তির আবহে তার পুনরাবৃত্তি চাইছেন না গেরুয়া নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, রবিবার ইরানে আমেরিকার এয়ার স্ট্রাইকের পরে দলীয় মুখপাত্রদের তাঁরা এ বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটার নির্দেশ দিয়েছেন। একান্তই পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষ পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে হলে, শুধুই শান্তির বাণী ছড়াতে বলা হয়েছে দলীয় নেতা–নেত্রীদের।
পহেলগামে জঙ্গি হামলার জবাবে পাক অধিগৃহীত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের বহু জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’।
সেনাবাহিনীর এই সাফল্যের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবিকে সামনে রেখে দেশের সর্বত্র ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ শুরু করে বিজেপি। সেই সময়েই কিছু পদ্ম নেতার বিবৃতি বেকায়দায় ফেলে গোটা গেরুয়া শিবিরকে। ওই সব বিতর্কিত মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিরোধী শিবির চাপ তৈরি করে বিজেপির উপরে।
পশ্চিম এশিয়ার উত্তপ্ত পরিস্থিতির আবহে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন। কারণ, ইরান–ইজ়রায়েল সংঘর্ষ পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপির কোনও হেভিওয়েট নেতা বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলে তার প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে।
এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার কথায়, ‘অপারেশন সিঁদুরের পরে কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন আমাদের দলেরই এক মন্ত্রী। দলের আর এক প্রবীণ সাংসদ পহেলগামে জঙ্গিহানায় স্বামী হারানো মহিলাদের সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
কিন্তু তার অভিঘাত সীমাবদ্ধ ছিল দেশের রাজনৈতিক গণ্ডির মধ্যে। ইরান–ইজ়রায়েল সংঘর্ষ আমেরিকার নাক গলানো উচিত কি না, সে সব নিয়ে দলের কেউ সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করলে তার প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। তাই দলের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে দলের অনেকে আমেরিকার পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করবেন, কেউ বা বিপক্ষে। জল ততদূর গড়ানোর আগেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বর তরফে সবাইকে সতর্ক করে বলা হয়, পার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও নেতা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে এমন কোনও মন্তব্য করবেন না, যা ভারতের বিদেশনীতির বিরুদ্ধে যায়।
সব থেকে ভালো হয় কিছুই না বললে। দলের কোনও নেতাকে সংবাদমাধ্যমে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এ দিনের এক্স হ্যান্ডল পোস্টের ‘স্পিরিট’টা মাথায় রাখতে বলা হয়েছে।
বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘অপারেশন সিঁদুরের পরেও পাখি পড়ানোর মতো দলের সবাইকে শেখানো হয়েছিল যে, সংবাদমাধ্যমে এই অপারেশন সম্পর্কে কী কী বলা যাবে, আর কী কী বলা যাবে না। কিন্তু তারপরেও তো সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে কতটা লাগাম টানা যায়, সেটা সময়ই বলবে।’