এনকেডিএ-র বাজার কার্যত জতুগৃহ, নেই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা
আনন্দবাজার | ২৩ জুন ২০২৫
জতুগৃহের সব রসদই মজুত রয়েছে। বাজারের বাইরে টায়ারের দোকান। ভিতরে জামাকাপড় আর বালিশ-তোশকের দোকান।কোথাও আবার ত্রিপল ও প্লাস্টিকের ছাউনি, কোথাও প্লাইয়ের জিনিসপত্রের দোকান। সবই রয়েছে। নেই শুধু আগুন লাগলে দ্রুত তা মোকাবিলা করার সরঞ্জাম। ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই দোকানে রাখেন না অগ্নি-নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা। গোটাসরকারি বাজারে রাখা নেই আগুন লাগলে তার মোকাবিলায় সরঞ্জাম। এই ছবিটা নিউ টাউনের প্রতিটি সরকারি বাজারের।
উল্লেখ্য, কলকাতার মেছুয়াপট্টিতে হোটেলে আগুন লেগে ১৪ জনের মৃত্যুর পরে নিউ টাউনের একাধিক এলাকায় আবাসিক বাড়িতে চলা বাণিজ্যিক সংস্থার ব্যবসাবন্ধ করে দিয়েছে এনকেডিএ। অভিযোগ, সংস্থাগুলির ফায়ার লাইসেন্স-সহ অনেক নথিই ছিল না। এমতাবস্থায় প্রশ্ন, কেন এনকেডিএ তাদের বাজারগুলিতে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা মজুত রাখেনি?
নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) দাবি করেছে, তাদের অন্যান্য সংস্থাগুলির সদর দফতর,বিজনেস ক্লাবে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা মজুত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় মেছুয়ার হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রাণহানি কিংবা খিদিরপুর বাজারের ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পরে তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিতে মক ড্রিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের দাবি, নিউ টাউনের বাজারগুলি বছর সাতেক আগের তৈরি। তখন ওই সব ব্যবস্থা সেখানে করা হয়নি। তবে এ বার বাজারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে আধিকারিকেরা জানান।
নিউ টাউনের বাসিন্দারা দৈনন্দিন বাজার বা অন্যান্য কেনাকাটা করতে মূলত এনকেডিএ-র বাজারগুলিতে যান।নিউ টাউনে এই ধরনের ১২টি ‘হকার মার্কেট’ রয়েছে। শুরুতে যখন নিউ টাউন গড়ে উঠছিল, তখন ওই বাজারগুলিও তৈরি হয়। যেগুলি এখন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এনকেডিএ-র। বিধাননগর পুলিশের নিউ টাউনের ডিসির অফিসের অদূরেইরয়েছে দু’টি বাজার। এক দুপুরে সেখানে ঢুকে দেখা গেল, কাঁচা আনাজের পাশাপাশি বহু ধরনের দাহ্যবস্তুর দোকানও রয়েছে সেখানে। বাজারের একটি প্রবেশপথের বাইরেই রয়েছে টায়ারের দোকান। বাজারের পিছনের অংশে কোথাও রয়েছে ত্রিপল, কোথাও রয়েছে প্লাইউডের দোকান।
ওই বাজারের পাশেই অন্য আর একটি বাজার আছে। সেখানে খাবার বা চায়ের দোকান সবই রয়েছে। কিন্তু সেই সিংহ ভাগ দোকানেও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সাম্প্রতিক কিংবা অতীতে কলকাতা শহরের একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তাঁদের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি করেনি, তা বেশ স্পষ্ট। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে জলের ব্যবস্থা আছে। তবে আলাদা করে কোনও অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই।
উল্লেখ্য, নিউ টাউনের ওই সব সরকারি বাজার যখন তৈরি হয়, তখন সেখানকার বাসিন্দাদের সংখ্যা ছিল যথেষ্ট কম। বর্তমানে আবাসিক সংখ্যা এক লক্ষের সামান্য বেশি বলেই সরকারি হিসেব। তার বাইরে প্রতিদিন নিউ টাউনে বিপুল সংখ্যক মানুষ নানা কারণে যাতায়াত করেন। ফলে তাঁদের জমায়েত এনকেডিএ-র বাজারগুলিতেও হয়।
আধিকারিকেরা জানান, বাজারগুলিতে এমনিতেই একাধিক প্রবেশপথ রয়েছে। সেই সময়ে জনবসতি কম ছিল বলেই সম্ভবত আলাদা করে বাজারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি। এনকেডিএ-র এক শীর্ষকর্তা জানান, এক আধিকারিককে নিয়োগ করা হয়েছে অগ্নি-সমীক্ষার বিষয়টি পরিচালনা করার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ নাগরিকদেরও যেমন অগ্নিবিধি মানতে সতর্ক করা হচ্ছে, তেমনই আমাদেরও কোথায় কোথায় ত্রুটি রয়েছে, তা দেখে নেব। নিরাপত্তার প্রয়োজনে যা যা করণীয়, তা করা হবে।’’