জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে আলিপুর দেওয়ানি আদালতের একাধিক ভবন। প্রায় প্রতিদিন ছাদ থেকে খসে পড়ছে চাঙড়। সম্প্রতি বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচেছেন ওই আদালতের অষ্টম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক এবং তাঁর ঘরের কর্মীরা।
আদালত সূত্রের খবর, ঘটনার সকালে সে দিন কোনও মামলার শুনানি ছিল না। সেই সময়ে ছাদ থেকে বিশাল চাঙড় ভেঙে পড়ে বিচারকের টেবিল ও চেয়ারে। সেই সময়ে ঘরে ছিলেন শুধুমাত্র স্টেনোগ্রাফার। তিনি সামান্য জখম হয়েছেন। এর পরেই ওই দিন আদালতের সব শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। আদালতের কর্মীদের কথায়, ‘‘শুনানি চলাকালীন এই ঘটনা ঘটলে বিচারক-সহ ১০ থেকে ২০ জন গুরুতর জখম হতে পারতেন। মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল।’’ ঘটনার পরপরই ওই আদালত স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
কর্মীরা জানাচ্ছেন, শুধু দেওয়ানি আদালতই নয়। জেলা বিচারকের ভবন-সহ আদালতের প্রায় প্রতিটি ভবনেরই দশা বেহাল। মাঝেমধ্যেই ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়ছে। কয়েক জন কর্মী অল্পবিস্তর জখমও হয়েছেন। অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের ঘরে চাঙড় ভাঙার ঘটনার পরে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়ে জেলা বিচারককে চিঠি দিয়েছে আদালতের কর্মচারী সমিতি।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি আলিপুর আদালতের জরাজীর্ণ ভবনগুলি সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য পূর্ত দফতর। বছর কয়েক আগেও কোনও ভবনের ছোটখাটো ভাঙাচোরা সংস্কার করতেন পূর্ত দফতরের ঠিকাদারেরা। কিন্তু সূত্রের খবর, বর্তমানে ঠিকাদারদের লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়ে গিয়েছে। ফলে, সংস্কারের কাজ কার্যত বন্ধ।
সরকারি আইনজীবীদের একাংশের কথায়, ‘‘কোথাও ফাটল দেখা দিলে জোড়াতাপ্পি দিয়ে কাজ করা হত। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ আলিপুর আদালতের বিভিন্ন ভবনে প্রতিদিন বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীদের যাতায়াত লেগে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ভবনগুলির জরাজীর্ণ দশা সংশ্লিষ্ট সব মহলে বাড়াচ্ছে আতঙ্ক। কখন, কোন বারান্দা বা ঘরের ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়বে, সেই ভয়ে থাকতে হচ্ছে আইনজীবী ও কর্মীদের।
কর্মীরা জানান, অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের ঘরে চাঙড় ভাঙার ঘটনার পরে জেলা বিচারককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে পূর্ত দফতরের সঙ্গেও। কর্মীদের কথায়, ‘‘অধিকাংশ জায়গায় ছাদের চাঙড় ভেঙে রড বেরিয়ে এসেছে। সংস্কারের পরেও সেখান থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ছে চাঙড়। অধিকাংশ জায়গায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।’’
পূর্ত দফতরের অবশ্য দাবি, অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের ঘরের সংস্কার শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, আদালত ভবনের কোন কোন জায়গায় ছাদ ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি হয়েছে, সেটাও দেখা হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব অংশই সংস্কার করা হবে।