খুব ‘নীরব রাজনীতিক’ তিনি নন, তাই তাঁর প্রশ্নবাণ এবং যুক্তিতে ভাবতে বাধ্য হন কেন্দ্রের দাপুটে নেতৃত্বরাও। কিন্তু নিজ সংসদীয় ক্ষেত্রের বিষয়ে তাঁর স্ট্র্যাটেজি ঠিক উল্টো। ভোটের প্রস্তুতি হোক বা উন্নয়ন, সবই ‘নীরবে’ বা ‘নিঃশব্দে’ সারতেই ভালোবাসেন। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে হয়ে আসছে এমনটাই। সেই ধারা অব্যাহত রেখে প্রতিবারের মত এবারও রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের আলোচ্য বিষয় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’। চলতি বছরের ২৫ জুন অর্থাৎ বুধবার দুপুর ৩টেয় সাতগাছিয়া বিধানসভার অন্তর্গত শ্রীকৃষ্ণপুর বোরহানপুর স্কুল ফুটবল ময়দান থেকে এই বই প্রকাশ করবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় খোদ।
এতদিন দেখা গিয়েছে, সাংসদ হিসেবে তাঁর সাফল্যের খতিয়ান অভিষেক তুলে ধরেন বই আকারে। তিনি অর্থের হিসাব দিয়ে বুঝিয়ে দেন তাঁর সাংসদ তহবিলের কত পরিমাণ অর্থ কোন খাতে খরচ হয়েছে। এবার কেবল গত পাঁচ বছরের হিসাবই নয়, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ হিসাবে তাঁর পথ চলার সুদীর্ঘ ১১ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’র মাধ্যমে প্রকাশ করবেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। সংশ্লিষ্ট বইতে গুরুত্ব পাবে ‘কল্পতরু’, ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’র মত একাধিক পুরনো প্রকল্পের পাশাপাশি ‘সেবাশ্রয়’, ‘এক ডাকে অভিষেক’র মত একাধিক নতুন প্রকল্পও। সংশ্লিষ্ট পোস্টারটি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন অভিষেক খোদ, সেখানে লেখা ‘ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের গণদেবতার কাছে সাংসদ কর্তৃক ১১ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান প্রকাশ।’
গতবছর লোকসভা নির্বাচনের প্রচার থেকে একাধিক বার নিজ উন্নয়নকার্যের খতিয়ান তুলে ধরেছিলেন অভিষেক। হিসাব দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘গত দশ বছরে (২০১৪-২৪) পাঁচ হাজার পাঁচশো আশি কোটি টাকার কাজ করেছি। তাহলে একবছরে পাঁচশো আটান্ন কোটি টাকার কাজ হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসে পয়তাল্লিশ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। সুতরাং, প্রত্যেক দিন এক কোটি পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে এই ডায়মন্ড হারবারে। এক ঘন্টায় হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকার কাজ। আমি নিঃশব্দে বিপ্লব করি।’ এবার সাংসদ অভিষেকের এই মৌখিক হিসাবই নিঃশব্দ বিপ্লবে প্রকাশ পেতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে প্রথম নিঃশব্দ বিপ্লব প্রকাশ করে বিরাট জনসমর্থন আদায় করেছিলেন অভিষেক। হাতে-কলমে সাংসদ তহবিলের অর্থের হিসাব দিয়ে ভারতের বুকে গড়েছিলেন নজির, অর্জন করেছিলেন লক্ষাধিক মানুষের বিশ্বাস। এবার বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। কেবল রাজ্য নয়, বর্তমানে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও পোক্ত তৃণমূলের অবস্থান। সার্বিক এই পরিস্থিতিতে ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ কোনও বিচ্ছিন্ন কর্মসূচি নয়। এ আসলে নিঃশব্দে সাংসদ অভিষেকের আবারও পথ প্রশস্ত করার প্রয়াস।