বৃষ্টি কমলেও এখনও জলের তলায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বিস্তৃর্ণ এলাকা। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকের পরও জল ছাড়ল ডিভিসি, যার জেরে ক্ষুব্ধ রাজ্যও। এবার ডিভিসি না জানিয়েই ৭১ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে, জানালেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। বন্যা-পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার ঘাটাল মহকুমা শাসকের দপ্তরে প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন সেচমন্ত্রী। এরপর বন্যা পরিদর্শনেও যান তিনি। তার আগে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বন্যার জন্য ডিভিসিকেই বিঁধলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ডিভিসির চুক্তি হয়েছিল, তারা জানিয়ে জল ছাড়বে। সেই মতোই চলছিল। ৬০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু ছাড়া হয়েছে ৭১ হাজার কিউসেক। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। আমাদের কাছে তথ্য আছে, অস্বীকার করতে পারবে না।’ পাশাপাশি বন্যা-পরিস্থিতি মোকাবিলায় মন্ত্রী সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথাও বলেছেন।
উল্লেখ্য, ঘাটালের ১০টি, চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের ৫টি ও চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত বন্যাকবলিত। ঘাটাল পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডেও জল ঢুকেছে। ১৮৮টি গ্রাম বন্যা কবলিত। প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, ২ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বিশেষ শিবিরে। কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মোট ৪৩টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। যার অনেকগুলি এখনও চলছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। দুয়ারে ডাক্তার ও মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এদিন মন্ত্রী আরও জানান, ৫৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে, যা দুর্গতদের দেওয়া হবে। পানীয় জলের জন্য ট্যাঙ্কার ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০ হাজার জামাকাপড় বিলি করা হয়েছে প্লাবিত এলাকায়।
মানস বলেন, ‘এই বন্যায় প্রায় ২২০৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাগাতার খোঁজ নিচ্ছেন। গ্রামবাসী থেকে প্রসাশনের উচ্চস্তরের প্রতিটি ব্যক্তি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। ১৯৭৮ সালের পর এই রকম বান আসেনি। আমাদের ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজও চলছিল, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে! এর মাঝে শনিবার রূপনারায়ণও ফুলে উঠেছিল। এখন জল একটু নামছে। বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’