এই সময়, পুরুলিয়া: আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে জেলা সংগঠনকে শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত মাসেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন পদাধিকারীদের নামও প্রকাশ করে দিয়েছেন।
কিন্তু তার পরেও পুরুলিয়া জেলায় শাসকদলের কোন্দলে রাশ টানা যাচ্ছে না। রবিবার ফের সেই ছবি প্রকাশ্যে চলে এল।
শনিবার বিকেলে রাজ্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে জেলার যুব, আইএনটিটিইউসি এবং মহিলা সংগঠনের জেলা সভাপতি–সভানেত্রীদের নাম ঘোষিত হয়েছে। তার পরেই সমাজমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র ব্যঙ্গোক্তি।
আক্রমণের কেন্দ্রে রয়েছেন অতীতে বাম এবং তার পরে গেরুয়া শিবিরে কিছু দিন কাটিয়ে শাসক–শিবিরে যোগ দেওয়া গৌরব সিংহ। পাশাপাশি শ্লেষাত্মক মন্তব্যও উড়ে এসেছে শাসকদলের ভোটকুশলী সংস্থাকে লক্ষ্য করেও।
সমাজমাধ্যমে জনৈক তৃণমূল সমর্থকের মন্তব্য, ‘বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ, জ্যৈষ্ঠে লোকনাথ, আষাঢ়ে জগন্নাথ, শ্রাবণে তারকনাথ।’ কেউ আবার একদা জনপ্রিয় বাংলা গানের লাইন তুলে লিখেছেন, ‘একই অঙ্গে এত রূপ, দেখিনি তো আগে।’
সেই প্রসঙ্গেই এসেছে জেলার প্রথম সাংসদ ভজহরি মাহাতোর নামও। স্বাধীনতার পরে তামাম মানভূমে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে যে লড়াই হয়েছিল, সেই আন্দোলন মানভূমের ভাষা আন্দোলন নামেই পরিচিত।
তার নেতৃত্বে অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন ভজহরি। সেই প্রসঙ্গ টেনে সমাজমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ‘ভজহরি মাহাতোর জেলায় এমন দশা!’
গৌরব এই মুহূর্তে দলের শহর যুব তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্বে। দলের অন্দরেও অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিবাদী মুখও। সম্প্রতি পুরুলিয়া শহরে দলের পুরনো কার্যালয়ে প্রয়াত নেতাকর্মীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের অনুষ্ঠানে গৌরবের মুখে শোনা গিয়েছিল পুরুলিয়া পুরসভার কাউন্সিলারদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা।
তিনি বেশ কিছু কাউন্সিলারকে দলের পক্ষে ‘বিপজ্জনক ভাইরাস’ বলেও চিহ্নিত করেছিলেন। তার পরেই রাজ্য জেলা যুব সংগঠনের ব্যাটন তুলে দেওয়া হয়েছে গৌরবকে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন গৌরবকে নিয়ে এতটা ক্ষুব্ধ জেলার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ? তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এর নেপথ্যে রয়েছে এই যুব নেতার ঘনঘন দলবদলের কাহিনি। একদা বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
পরে বাম শিবির ছেড়ে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) জেলা কো–অর্ডিনেটরের দায়িত্ব নেন। ২০১৮ সালে ফের শিবির পরিবর্তন! তিনি চলে যান তৃণমূলে। ঘনঘন দল পাল্টানো এমন একজনকে কেন ফের দায়িত্ব দেওয়া হল, তা নিয়েই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
যদিও গৌরব বলছেন, ‘আমাকে তো দলই নিয়ে এসেছিল। অতীত নয়, বর্তমানই বিচার্য। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন থেকে দলের কাজ করছি। তৃণমূলে আসার পরেও আমাকে পুলিশি মামলায় জড়াতে হয়েছে। তবে দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবেই কাজ করে চলেছি। যে দায়িত্ব এখন দেওয়া হলো, তা–ও সুষ্ঠু ভাবে পালন করব।’
জেলায় সাংগঠনিক রদবদলের পরে নতুন সভাপতি রাজীবলোচন সরেন দলের সর্বস্তরে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সাংগঠনিক বিষয়ে দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে,এমন মন্তব্য সমাজমাধ্যমে করা যাবে না। তার পরেও কেন এই পরিস্থিতি?
দলের জেলা চেয়ারপার্সন শান্তিরাম মাহাতোর মন্তব্য, ‘সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট না–করলেই ভাল। শাখা সংগঠনের সভানেত্রী বা সভাপতিদের নাম তো রাজ্য নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে। আমাদের তা মেনে নিতে হবে।’