এই সময়, আসানসোল: পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম শিল্পতালুকের অন্তর্গত জামুড়িয়ার ইকরা অঞ্চল। এখানে প্রায় ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে ১৮টি ইস্পাত-সহ নানা ধরনের কারখানা রয়েছে। ৪০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন এই কারখানাগুলিতে।
অথচ ইকরা স্টেশন সম্পর্কে নির্বিকার রেল। একই ভাবে জামুড়িয়া বিধানসভার জামুড়িয়া এবং তপসি রেলস্টেশন জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অভিযোগ, যাত্রী স্বার্থ–সহ সামগ্রিক উন্নয়ন এখানে হয়নি।
ইকরার বাসিন্দা অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘ইকরা কয়েকশো বছরের প্রাচীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম। শুধু শিল্পের কারণেই নয়, সাধক বামদেব এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করতেন। তাঁর নামে আলাদা শ্মশানও রয়েছে। রেলের উচিত এই স্টেশনকে হেরিটেজ বলে চিহ্নিত করা।’
এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্যও একই ধরনের। তাঁরা জানাচ্ছেন, রেল আধিকারিকরা মুখে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বললেও বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন ধরা পড়ছে না। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর শ্রমিক এই স্টেশন থেকে অন্ডাল-জসিডি ট্রেনে যাতায়াত করেন। একমাত্র এই ট্রেনটি দাঁড়ায় এই স্টেশনে। ফলে যাত্রীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
ইকরা স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, যাত্রীদের বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। প্ল্যাটফর্মগুলি এত নিচু যে, অন্ডাল–জসিডি ট্রেনটি ধরার জন্য যদি কোনও বয়স্ক বা শারীরিক ভাবে অক্ষম কেউ আসেন, তা হলে অন্যের সাহায্যে তাঁকে ট্রেনে উঠতে হবে।
সন্ধেবেলা অন্ধকারের মধ্যেই যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয়। আলোর কোনও ব্যবস্থাই নেই। স্বদেশ মণ্ডল নামে এক রেলকর্মী গেটম্যানের কাজ করছেন। তিনি জানান, তপসি থেকে একজন টিকিট নিয়ে আসেন এবং এখানে স্ট্যাম্প লাগিয়ে সেই টিকিট বিক্রি করেন। সেই অর্থে আলাদা করে টিকিটের কোনও কাউন্টার নেই।
রিজ়ার্ভেশনেরও ব্যবস্থা নেই। প্ল্যাটফর্মের দু’পাশে রয়েছে জঙ্গল। তার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই। নেই পানীয় জল বা শৌচালয়ের স্থায়ী ব্যবস্থা। আরও আশ্চর্যের, জামুড়িয়া স্টেশনে করোনার সময়ে রেল কর্তৃপক্ষের তরফে যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রতীক্ষালয়, শৌচালয় সমেত একাধিক উন্নয়নের কাজ করা হলেও এখনও পর্যন্ত সেই ভবন চালু হয়নি।
জামুড়িয়া স্টেশনের শৌচালয়ে তালা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন মহিলা যাত্রীরা। একই অবস্থা তপসি স্টেশনেরও।
স্টেশনগুলির সার্বিক উন্নয়নের জন্য বারবার রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে জানান জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক এবং জামুড়িয়ার বাসিন্দা অজয় খৈতান।
তাঁর মন্তব্য, ‘কেন যাত্রীদের জন্য প্ল্যাটফর্ম, বসার জায়গা, শেড, পানীয় জল, শৌচালয় এবং রিজ়ার্ভেশনের ব্যবস্থা থাকবে না? এই লাইনে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো হোক।’
জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিংয়ের বক্তব্য, ‘রেলের উচিত জামুড়িয়ার এই তিনটি স্টেশনের সামগ্রিক উন্নয়নের নজর দেওয়া।’ একই দাবি জামুড়িয়ার সিপিএম নেতা মনোজ দত্ত বা বিজেপি নেতা সন্তোষ সিংয়ের।
আসানসোল রেল ডিভিশনের জনসংযোগ দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই স্টেশনগুলির প্ল্যাটফর্মের উন্নতি, জল, শৌচালয় এবং শেডের ব্যবস্থা করার জন্য পূর্ব রেলের সদর দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হবে। কয়েক মাসের মধ্যে কাজও হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।