এই সময়, মেদিনীপুর ও ঘাটাল: কোথাও রয়েছে জল। আবার কোথাও রবিবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কিন্তু আকাশে কালো মেঘ দেখলেই আঁতকে উঠছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা, গড়বেতা ও ডেবরা, ঘাটালের মানুষজন। এ দিকে, ঘাটালে জল জমে রয়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এই চিন্তায় দিন গুনছেন স্থানীয় মানুষ।
প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘাটালে বিঘের পর বিঘা জমি জলের তলায়। এক হাঁটুজলে নেমে প্রশাসনের লোকজন কাজকর্ম করছেন। জলবন্দি হয়ে রয়েছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের জনজীবন ব্যহত হচ্ছে।
এক পড়ুয়া বলে, ‘বাড়ির থেকে বেড়োনো যাচ্ছে না। কখন বই ভিজে যাবে, তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। আর কতদিন এ ভাবে থাকতে হবে, জানি না।’ ঘাটাল শহরের আড়গোড়া, অজবনগর, সিংপুর-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা এখনও জলমগ্ন।
নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা। সরকারি উদ্যোগে খেয়া পারাপারের জন্য বিনামূল্যে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে লেখা আছে, ‘সরকারি খেয়া, পয়সা লাগে না।’ ৬০ বছরের সনাতন রায় ৩২ বছর ধরে নৌকা চালান।
তিনিই এখন খেয়া পারাপারের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, ‘৩২ বছরে অনেক বৃষ্টি দেখেছি। কিন্তু এ বার শুরুটা দেখে মনে হচ্ছে বর্ষায় ঘাটালের মানুষের কপালে অনেক কষ্ট আছে। কী হবে, ভাবতেই শিউরে উঠছি।’
ঘাটালের বাসিন্দা মানিক মাহিন্দার বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৮০। এ ভাবে জলবন্দি হয়ে আর থাকতে ভালো লাগে না।’ ইতিমধ্যে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে জলমগ্ন এলাকাগুলিতে স্পিড বোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প এবং ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দুপুর এবং রাতের খাবারের জোগান দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ শিবিরে। আবার গড়বেতার ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা অতীত দোলই বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সব মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। রাস্তা ভেঙেছে। জল যদি আবার বাড়ে, কোথায় যাব জানি না।’
লছিপুরের রঞ্জিত পাল বলেন, ‘নদী-নালা-খাল-বিল সব ভরা, এর মধ্যে আবার বৃষ্টি হলে কী হবে!’ ঘাটালের ওয়েল্ডিং দোকানগুলোতে ছোট ডিঙি তৈরির হিড়িক পড়েছে। আড়গোড়ার দোকানগুলোতে জোরকদমে ইস্পাতের নৌকা তৈরির কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, কিছু এলাকায় জল নামছে, ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে, চলছে ত্রাণ বিলিও।
রবিবার সেচমন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া ঘাটালে এসে জলের পরিস্থিতি দেখেন। তিনি বলেন, ‘ঘাটালের ১০ টি, চন্দ্রকোণা–১ ব্লকের ৫টি, চন্দ্রকোণা–২ ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন। খড়ার এবং ঘাটাল পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ড ক্ষতি হয়েছে।
প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের ক্ষতি হয়েছে। দুই হাজারের বেশি মানুষকে আমরা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দিতে পেরেছি। তাঁদের খাবার, ওষুধ বা ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হয়েছে। আমরা স্লুইসগেটগুলি দিয়ে আপাতত জল আটকাতে পেরেছি।
মুখ্যমন্ত্রী সবসময় ঘাটালের উপরে নজর রেখেছেন। জল কমতে শুরু করেছে। ভয়ের কারণ নেই। জল নামলে আমরা প্রশাসনিক বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের রাস্তা বের করতে পারব।’ এ দিন পিংলার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতিও উপস্থিত ছিলেন।
জলমগ্ন ঘাটালে এসেছিলেন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। তিনি দেবকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘দেব এখানে শুটিং করতে আসবেন না। সরকারের আগে উচিত ছিল নদী সংস্কার করা। তা হলে এই পরিস্থিতি বছর বছর দেখতে হতো না।’
এ দিন এসেছিলেন খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘একদিকে ইরান–ইজ়রায়েলে যুদ্ধ চলছে। আর ঘাটালের মানুষ বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছেন।’