• রামপুরহাটের বনহাটে ব্যাঘ্রচণ্ডী মন্দিরে অম্বুবাচী উৎসবে মাতলেন এলাকাবাসীরা
    বর্তমান | ২৩ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রামপুরহাটের জঙ্গলে ঘেরা বনহাট গ্রামে ব্যাঘ্রচণ্ডী মাতার মন্দিরে অম্বুবাচী উৎসবে মেতে উঠল কয়েক হাজার মানুষ। প্রাচীন এই উৎসব এলাকাবাসীর কাছে সম্প্রীতির পুজো নামেও খ্যাত। এখানে মায়ের ভোগ রান্না থেকে পরিবেশন সবেতেই হিন্দু, মুসলিম ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ হাত লাগান। পাত পেড়ে একসঙ্গে ভোগও খান তাঁরা। রবিবার এই উৎসবে শামিল হয়েছিলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।  

    একসময়  গাঢ় জঙ্গলে মাটির ঢিবির উপর ব্র্যাঘ্রচণ্ডী মায়ের পুজো হতো। কথিত আছে, সাধক বামাখ্যাপা তারাপীঠ থেকে মুলটি গ্রামে তারা মায়ের দিদি মা মৌলিক্ষা কালী মন্দিরে যাওয়ার আগে বনহাটে ব্যাঘ্রচণ্ডী মায়ের পুজো করে তবেই সেখানে যেতেন। ঠিক কত বছর থেকে এখানে মায়ের নিত্যপুজো হয়ে আসছে তা কেউই বলতে পারেন না। তবে অনেকের দাবি, প্রায় পাঁচশো বছর আগে থেকে এই পুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে এলাকাবাসীর দানে সেখানে মায়ের পাকা মন্দির, ভোগঘর ও একটি গেস্টহাউস নির্মাণ হয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত বনহাট গ্রাম। খুব অল্প সংখ্যক হিন্দু ও আদিবাসী পরিবারের বসবাস। মন্দির ও গেস্টহাউস নির্মাণে মুসলিমদের অবদানও রয়েছে বলে দাবি মন্দির কমিটির। প্রতি বছরই ঘটা করে এখানে অম্বুবাচী উৎসব পালিত হয়। তবে যত দিন যাচ্ছে আড়ম্বর বেড়েই চলেছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে মায়ের বিশেষ পুজো শুরু হয়। পরে দুপুরের দিকে পাঁচরকম ফল, কাজু, কিসমিস দিয়ে তৈরি পায়েস, খিচুড়ি, পাঁচ তরকারি ও চাটনি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। সব সম্প্রদায়ের মানুষ ভোগ রান্না করেন। এদিন ভোগ রান্না করেন উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃদয় চট্টোপাধ্যায়, সাবা হেমব্রম, চঁই হেমব্রম, বাবাই শেখ, কাপাস শেখরা মিলে। তাঁরা বলেন, ব্র্যাঘ্রচণ্ডী মাতার অম্বুবাচী উৎসব সব সম্প্রদায়ের মিলনের উৎসব। এখানে জাত-ধর্ম বলে কিছু নেই। আমরা একসঙ্গে বসে ভোগ খাই। মন্দির পরিচালন কমিটির সভাপতি স্বপন মণ্ডল বলেন, এটা আমাদের কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎসব। আদিবাসী, হিন্দু, মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষ পুজোয় সহযোগিতা করেন। এদিন বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে পাত পেড়ে মায়ের ভোগ খাওয়ানো হয়। তিনি বলেন, কামাখ্যা মায়ের অম্বুবাচী উৎসব যখন হয় তখন এখানেও সেই উৎসব পালিত হয়। অন্যান্য বছরের মতো এদিনও পুজো দেখতে আসেন এলাকার বিধায়ক আশিসবাবু, তৃণমূলের রামপুরহাট-১ ব্লক সভাপতি নীহার মুখোপাধ্যায়, বনহাট অঞ্চলের তৃণমূল নেতা জহরুল ইসলাম প্রমুখ। আশিসবাবু বলেন, এটা শুধু অম্বুবাচী উৎসব নয়। সম্প্রীতির মিলন স্থানও বলা যেতে পারে। মন্দিরের পুরোহিত কুমোদরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, আগে এখানে বলিদান প্রথা থাকলেও গতবছর থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)