১৪ বছর পার, তৈরি হল না সুইমিং পুল, বোলপুরে হতাশ ক্রীড়াপ্রেমীরা
বর্তমান | ২৩ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: বোলপুরে সুইমিং পুল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১৪বছর পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও সুইমিং পুল তৈরি হয়নি। পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী থাকাকালীন চন্দ্রনাথ সিনহা বোলপুরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ময়দান সংলগ্ন এলাকায় এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তবে ওই পর্যন্তই। এই নিয়ে পরবর্তীকালে ন্যূনতম পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ক্রিকেট, ফুটবলের পাশাপাশি সাঁতার অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা হওয়া সত্ত্বেও বোলপুরবাসী এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বভাবতই বোলপুরের মতো বড় শহরে সুইমিং পুলের কোনও সুবিধা না থাকায় হতাশ ক্রীড়াপ্রেমীরাও। সরকার ও জেলা প্রশাসন এবিষয়ে কবে তৎপর হয় সেদিকেই এখন নজর সকলের।
প্রসঙ্গত, সাঁতার কেবলমাত্র একটি খেলা নয়। এটি একটি জীবনব্যাপী স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও জরুরি ভিত্তিতে প্রাণ বাঁচানোর রক্ষাকবচ। সুইমিং পুল শুধুমাত্র খেলাধুলোর জায়গা নয়, সুস্থ জীবনধারার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সুইমিং পুল, এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আধুনিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাঁতারকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ‘সম্পূর্ণ ব্যায়াম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত সাঁতার কাটলে কার্ডিও ভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, পেশী শক্তিশালী হয় ও নমনীয়তা বৃদ্ধি করে। এটি ক্যালোরি পোড়াতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া, নিয়মিত সাঁতার ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা হাঁপানি রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সাঁতার শেখা থাকলে বড় পুকুর বা নদীতে বিপদ ঘটলে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বোলপুর শহরে পুকুর ও জলাশয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আধুনিক প্রজন্ম সাঁতার ভুলতে বসেছে। সেইজন্য সুইমিং পুলের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১১সালের ৪সেপ্টেম্বর বোলপুরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলো মাঠ সংলগ্ন এলাকায় ঘটা করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। ওইদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ডব্লুবিএসআরডিএএর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায় ও জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। কিন্তু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনই সার। তারপর ১৪বছর কেটে গেলেও অজ্ঞাত কারণে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়নি।
ফলে, সাঁতার শিখতে বা অভ্যাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য বোলপুরের বাসিন্দাদের বিশ্বভারতীর সুইমিং পুলের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে সহজলভ্য হলেও বহিরাগতদের জন্য অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে বহিরাগত পড়ুয়াদের মাসে ১২০০টাকা ও বড়দের মাসিক ২৪০০টাকা খরচ পড়ে। যা অনেকেরই নাগালের বাইরে, এমনটাই শহরবাসীর একাংশের দাবি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি বোলপুরে সুইমিং পুল তৈরি করার জোর সওয়াল উঠেছে। এমতাবস্থায় প্রশাসন ও সরকার কবে এই উদ্যোগ নেয় সেদিকেই নজর সকলের। বোলপুরের বাসিন্দা সুমন ঘোষ ও তপন সরকার বলেন, এত বড় শহরে একটিও সুইমিং পুল না থাকা অত্যন্ত হতাশাজনক। এবিষয়ে প্রশাসন ও সরকারের দ্রুত নজর দেওয়া উচিত। কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, আমরা হাল ছাড়িনি। সুইমিং পুল তৈরির চেষ্টা চলছে। জমিজটের সমস্যা মিটলে দ্রুত পুল তৈরির কাজ শুরু হবে। -নিজস্ব চিত্র