সংবাদদাতা, কাটোয়া: অজয়ের পাড় থেকে ক্রমাগত মাটি ধসছে। রাস্তাটা গ্রামের শুরু থেকে এসে স্কুল পর্যন্ত গিয়েছে। বহু কষ্ট করে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে সেই রাস্তা তৈরি হয়েছিল। সেই রাস্তা ভেঙেছে একবছর আগে। এখনও পঞ্চায়েত থেকে রাস্তা সারানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অজয় নদ অজগরের মতো চারিদিক দিয়ে পেঁচিয়ে ধরেছে গ্রামটিকে। আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। এবার গ্রামটাই হয়তো কোনওদিন গিলে খাবে অজয়। আমাদের আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। এই আক্ষেপ শুনিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের।
কাটোয়া শহর থেকে শুনিয়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। সুড্ডা বাইপাস ধরে গ্রামে যাওয়া যায়। অজয়ের ভাঙনের জেরে ভেঙেছে গ্রামের মূল ঢালাই রাস্তা। এখন প্রতিবেশীর বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে সবাইকে। প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দারা। কাটোয়ার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখব।
কাটোয়া-১ ব্লকের কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শুনিয়া গ্রামটি কেতুগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে বছরের পর বছর হত্যে থেকে পড়ে থেকেও কোনও লাভ হয় না। কোনও কথাই নাকি শোনেন না প্রধান। পঞ্চায়েত সমিতিতে যোগাযোগ করেও হতাশ হতে হচ্ছে। ভোটের সময়ে সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়, কিন্তু ভোটের পর যেই কে সেই। গ্রামের অর্ধেক রাস্তা ঢালাই করেই দায়িত্ব শেষ করেছে প্রশাসন, তারপর আর কেউ খোঁজ রাখে না। অফিসে গেলেও কেউ কথা শোনে না।
শুনিয়া গ্রামে সাকুল্যে এখন ৮০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামে কোনও স্কুল নেই। ভোট দিতে যেতে হয় ৪ কিমি দূরে পাশের গ্রামে। ২০২১-২২ বর্ষে কাটোয়া-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি থেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে দেড় কিমি ঢালাই রাস্তা করা হয়। পাশাপাশি ৬ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্নানঘাট তৈরি করা হয়। ওই রাস্তাটিই গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় অজয়ের ভাঙনে ভেঙে গিয়েছে। তারপর থেকেই যাতায়াত বন্ধ। গ্রামের বাইরে গাড়ি রেখে ঢুকতে হয়। এ বিষয়ে জানতে কোশিগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঋজু সাহাকে বার বার ফোন, এসএমএস করা হলেও তাঁকে ধরা যায়নি।
বেশ কয়েকটি বাড়িও বিপজ্জনক ভাবে অজয়ের পাড়ে ঝুলছে। যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। রাস্তা অজয়ের গর্ভে যাওয়ায় গ্রামবাসী শান্তা হাজরার বাড়ির উপর দিয়ে সবাইকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বড় যানবাহন ঢুকছে না গ্রামে। শান্তাদেবী বলেন, আমার বাড়ির উপর দিয়েই এখন সবাই যাতায়াত করছে। আমার অসুবিধা হচ্ছে। আমি বাড়িতে কাজকর্ম করতে পারছি না। আবার উপায়ও তো নেই, রাস্তা সংস্কারের কেউ কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।
গ্রামের বাসিন্দা নান্টু হাজরা, নিধু হাজরা, রাধেশ্যাম হাজরা বলেন, আমরা জলের কাঁকড়ার মত ভেসে বেড়াই। কেউ খোঁজ রাখে না আমাদের। রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। লোক দেখাতে করে শাল কাঠ গ্রামে রেখে দিয়ে গিয়েছিল, বলেছিল কাজ হবে। ব্যস ওইটুকুই। গ্রামে কার্যত বন্দি জীবন কাটাতে হয় আমাদের।
গ্রামের মাটির বাড়ির বাঁশের জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারেন মহিলারা। গ্রামে কেউ বাইরে থেকে এলে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে বলেন, ‘হাতজোড় করে অনুরোধ করছি অজয় নদের ভাঙন থেকে আমাদের বাঁচান। আমরা তো ভোট দিই।’ -নিজস্ব চিত্র