• বন্যা-দুর্যোগে দেখা নেই বিজেপি সাংসদের, ক্ষুব্ধ পুরুলিয়াবাসী
    বর্তমান | ২৩ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: দুর্যোগেও দেখা নেই পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতর! গত মঙ্গলবার থেকে টানা বৃষ্টি। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পুরুলিয়ার জনজীবন। জলের তলায় চলে যায় পুরুলিয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুডাঙা এলাকা। চার-পাঁচদিন ধরে ত্রাণ শিবিরেই রাত কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন সকলেই। আশ্রয়হীন বহু মানুষ। অথচ, এমন বিপদের দিনে তাঁরা পাশে পেলেন না সাংসদকেই! এমনকী, দুর্গত মানুষদের অসহায় অবস্থা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও পোস্টও করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বিজেপির স্থানীয় নেতাদের কেউ এসে খোঁজও পর্যন্ত নেয়নি বলে অভিযোগ। গেরুয়া শিবিরের এই ভূমিকায় বেজায় ক্ষুব্ধ শিবিরে থাকা দুর্গতরা। কড়া কথায়  সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না নেটিজেনরাও। অন্যদিকে, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপির জনপ্রতিনিধিদের একহাত নিয়েছে তৃণমূল। কটাক্ষ করে তারা বলছে, মোদি, অমিত শাহের দল বড় বড় কথা বলে। কিন্তু, জনপ্রতিনিধি হওয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ওরা বিমুখ। বাংলার মানুষ ওদের এই দ্বিচারিতা ধরে ফেলেছে।    

    নিজের প্রচার নিজেই করেন বলে পুরুলিয়ার সাংসদের আলাদা একটা পরিচিতি রয়েছে। সারাদিন কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন—প্রতি মুহূর্তের আপডেট তিনি দিয়ে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাসে। অথচ, পুরুলিয়ার দুর্যোগ নিয়ে তাঁর কোনও পোস্ট নেই! নেই সমবেদনা। নেই পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বিপদের দিনে তাঁকে পাশে পাওয়া যায় না। সাংসদের সঙ্গে পুরুলিয়াবাসীর সম্পর্ক শুধুই যেন ভোটের! গত কয়েকদিন হিন্দুদের উপর আক্রমণের অভিযোগ তুলে কলকাতার রাজপথে হেঁটেছেন জ্যোতির্ময়বাবু। নিজের কার্যালয়ে বসেছেন। মৃত বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে সমবেদনাও জানাতে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক যোগা দিবসে ব্যায়াম করার ছবিও পোস্ট করেছেন। কিন্তু পুরুলিয়ার সাধুডাঙা সহ অন্যান্য জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় হয়নি তাঁর। 

    গত বুধবার হুড়ার বড়িয়ারপুর এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয় এক কলেজ ছাত্রীর। সাংসদ সেখানে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এনিয়ে সাংসদের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। সাংসদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের কমেন্ট বক্সে গিয়ে অমিত দাস নামে এক নেটিজেন লিখছেন, ‘জেলার এত বড় দুর্যোগে আপনি কি করছেন? সাধুডাঙা ভেসে গেল। এত মানুষের হাহাকার কী আপনার মর্মে স্পর্শ করছে না?’ শুভেন্দু পাত্র নামে আর এক নেটিজেনের মন্তব্য, ‘করোনার পর থেকে একাধিক ট্রেন বন্ধ। একশো দিনের কাজ বন্ধ। জেলাবাসীর এই সাধারণ সমস্যাগুলি সংসদে তুলে ধরবেন বলেই তো আপনাকে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি জেলার জন্য কি করেছেন তার হিসাব দিতে পারবেন তো?’ এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সাংসদকে ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। মেসেজেরও উত্তর দেননি তিনি। 

    বিজেপির জেলা সভাপতি শঙ্কর মাহাত অবশ্য বলেন, ‘এই দুর্যোগের দায় তো পুরসভার। পুরসভা নিকাশি নালা পরিষ্কার করবে না। সব টাকা শুধু নিজেদের পকেটে ঢোকালে এরকম পরিস্থিতি তো হবেই। পুরুলিয়ার মানুষ এই কারণেই তৃণমূলকে বয়কট করেছে।’ পাল্টা চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘পুরুলিয়ার এই পরিস্থিতির দায় রেলের। রেল অপরিকল্পিতভাবে লাইন পাততে গিয়ে নিকাশি বন্ধ করে দিয়েছে। সেই জন্যই মানুষকে ডুবতে হয়েছে।’ তৃণমূলের পুরুলিয়া শহর সভাপতি প্রদীপ ডাগা বলেন, ‘দুর্যোগের দিনগুলিতে তৃণমূলের কর্মীরা মাঠেঘাটে পড়ে ছিল। কিন্তু পুরুলিয়ার সাংসদ কিংবা বিধায়ককে দেখা যায়নি।’ পুরুলিয়ার দুর্যোগে জেলার সাংসদই শুধু নয়, অন্যান্য বিজেপি নেতাদেরও পাত্তা পাওয়া যায়নি। একমাত্র জেলা বিজেপির সহ সভাপতি গৌতম রায়কে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। তবে, তিনি এই কাজ করেছেন দলের ব্যানারে নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই।
  • Link to this news (বর্তমান)