• এটিএম লুটের পর এবার জুয়েলারির দোকান, প্রশ্নে শহরের আইন-শৃঙ্খলা
    বর্তমান | ২৩ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: এটিএম লুটের চারদিনের মাথায় জুয়েলারির দোকানে ডাকাতি। পরপর এই ঘটনায় শিলিগুড়ি শহরের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। এনিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, শুধু লুট ও ডাকাতি নয়, শহরে সাইবার ও অর্থনৈতিক অপরাধ, জাল নথি প্রস্তুত চক্র সক্রিয়। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ,পুলিসের নজরদারির অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুলিস অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। পদস্থ কর্তাদের দাবি, শহরের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছেন তাঁরা। 

    এদিকে, ঘটনাগুলি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপি ও সিপিএমের বক্তব্য, শহরের আইন-শৃঙ্খলা ক্রমশ বেহাল হচ্ছে। পাল্টা, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বিক্ষিপ্ত ওই ঘটনাগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। পুলিস অধিকাংশ ঘটনায় সাফল্য পেয়েছে। তবে, আন্তঃরাজ্য নজরদারি ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। 

    বুধবার গভীর রাতে শহরের চম্পাসারিতে একটি কাউন্টারের জোড়া এটিএম থেকে ১০ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা লুট করে দুষ্কৃতীরা। তিনদিন পরও পুলিস ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের নাগাল পায়নি। এই অবস্থায় রবিবার ভরদুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্র হিলকার্ট রোডে অভিজাত একটি জুয়েলারি দোকানে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এক সপ্তাহের মধ্যে পর পর এমন দু’টি ঘটনা নিয়ে আতঙ্কিত ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ। 

    শুধু লুট বা ডাকাতি নয়, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আধার ও সচিত্র ভোটার কার্ড জাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাইবার ক্রাইম, মিউল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে প্রতারণার টাকা পাচারের ঘটনাও ঘটছে। জমি নিয়ে বিবাদও অব্যাহত। মাদকের কারবারের রমরমা। সমগ্র ঘটনা নিয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিকরা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরব। তাঁদের অভিযোগ, শহরের নজরদারি নিয়ে পুলিসের মধ্যে গাছাড়া মনোভাব রয়েছে। তাই এখানে পর পর এটিএম লুট ও সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। 

    হিলকার্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সনৎ ভৌমিক বলেন, জুয়েলারির দোকানে ডাকাতির ঘটনা মানা যাচ্ছে না। পুজোর আগেই শহরের প্রতিটি অলিগলিতে সিসি ক্যামেরা বসানো, পুলিসি টহল বাড়ানো, ভিনরাজ্যের লোকদের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ রাখা, গোয়েন্দা বিভাগকে আরও সক্রিয় করার দাবি পুলিসের কাছে জানানো হবে। 

    শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিং অবশ্য বলেন, শহরের বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, বাজার সহ সর্বত্র নজরদারি চলছে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে নিয়মিত নাকাচেকিং হয়। জুয়েলারির দোকানে লুটের ঘটনায় দু’জনকে পাকড়াও করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। এটিএম লুট কাণ্ড নিয়েও তদন্ত চলছে। সাইবার ক্রাইম, জাল নথি তৈরি, মাদক কারবার সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাজেই পুলিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঠিক নয়। 

     স্থানীয় বিধায়ক বিজেপির শঙ্কর ঘোষ বলেন, এদিনের ডাকাতির ঘটনা শহরের আইনশৃঙ্খলার হাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, শহর নিরাপত্তা দিতে পুলিস কার্যত ব্যর্থ। 

    এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর শিলিগুড়ির মেয়র তৃণমূলের গৌতম দেব অবশ্য বলেন, শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কড়া হাতে দমন করা হবে। এই শহরের আশপাশে আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। রাজ্য দেখলেও তা একার পক্ষের সম্ভব নয়। এজন্য আন্তঃরাজ্য নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)