• আবহাওয়ার নিখুঁত তথ্য পেতে ISRO-র সাহায্যে আকাশে হিলিয়াম পূর্ণ বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়
    এই সময় | ২৩ জুন ২০২৫
  • জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হলো আবহাওয়া বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার এক নতুন ইতিহাস। রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ প্রতিষ্ঠানের পুরানো প্রশাসনিক ভবনের ছাদ থেকে উড়ল জিপিএস পরিচালিত, রেডিয়োসন্ড (আবহাওয়া বিষয়ক যন্ত্র) লাগানো হিলিয়াম পূর্ণ বেলুন। ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।

    রবিবার প্রশাসনিক ভবনের ছাদ থেকে বায়ুমণ্ডলের ২৭.৮৩১ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে এই বেলুন। বিকেল ৩টে ৫৩ মিনিট ৩ সেকেন্ড পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের পরীক্ষামূলক গবেষণার সমস্ত তথ্য মিলেছে এই বেলুন থেকে। এর পর এটি ধীরে ধীরে নীচে নামতে শুরু করে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৪.৮৬ কিলোমিটার রৈখিক দূরত্ব অতিক্রম করে বিকেল ঠিক ৩ টে বেজে ৫৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ড নাগাদ ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার গুরাবাঁধা বনাঞ্চলে নামে এই বেলুন।

    জানা গিয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তের জিপিএস লোকেশন দিয়েছে রেডিয়োসন্ড লাগানো এই বেলুন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরো-র বিজ্ঞানীরা জানান, যে উদ্দেশে এই বিশেষ বেলুন বায়ুমণ্ডলে পাঠানো হয়েছিল, তা সফল হয়েছে।

    স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, চাপ, বাতাসের গতিবেগ ও গতিবিধি সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এই বেলুন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের ডিরেক্টর, অধ্যাপক যতিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়াও বায়ুমণ্ডলের পরীক্ষামূলক গবেষণা তথা আবহাওয়া সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ধারণা লাভ এবং উপগ্রহের তথ্য যাচাইয়ের উদ্দেশে এই বেলুন উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

    বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল ইসরো (ISRO)-র অধীনস্থ ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সার্ভিস সেন্টার। এর পর রবিবার আকাশে হিলিয়াম পূর্ণ সুবিশাল বেলুন ওড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয় জেলা প্রশাসন এবং নিকটবর্তী কলাইকুন্ডা এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে। যতিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ই এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা। ইসরো-র তরফে সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. হারীফ বাবা সায়েব কে।

    এ দিন আবহাওয়া বিজ্ঞান সংক্রান্ত এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী। শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কুমার কর। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের এই অসাধারণ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এর ফলে অখণ্ড মেদিনীপুরের আবহাওয়া সংক্রান্ত ধারণা আরও সুস্পষ্ট ও সুন্দরভাবে পাওয়া যাবে।’

    এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা, অধ্যাপক যতিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পরীক্ষামূলক এই গবেষণাতে আমরা সফল হয়েছি। এই এলাকার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, চাপ, বাতাসের গতিবেগ ও দিক নির্দেশ সম্পর্কে আমরা একটা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে তা প্রকাশ করব। মাসে একবার করে এই জিপিএস এডেড এবং রেডিয়োসন্ড লাগানো বেলুন আকাশে (বায়ুমণ্ডলে) পাঠানোর লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি। এর ফলে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য এবং বৃষ্টি, বজ্রপাত, সাইক্লোনের মত প্রাকৃতিক বিষয়গুলি সম্পর্কেও আগাম ধারণা লাভ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করছি।’

  • Link to this news (এই সময়)