• এক সময়ের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুল আজ পড়ুয়াশূন্য, একা এসে বসে থাকছেন শিক্ষিকা ...
    আজকাল | ২৩ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসময়ের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুল আজ পড়ুয়াশূন্য। অথচ এই স্কুল থেকে পড়াশোনা করে অনেকে শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী হয়েছেন। পরে একটা সময় স্কুলের খুঁড়িয়ে চলা শুরু হয়। গত বছর দুজন ছাত্র থাকলেও এবছর এপ্রিল মাস একজন ছাত্র ছিল। অথচ স্কুলে পরিকাঠামোর কোনও ঘাটতি ছিল না। শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধি, কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীদের ছবি জ্বলজ্বল করছে। রয়েছে দেওয়াল জুড়ে মূল্যবান সমস্ত বাণী। অন্যান্য পরিকাঠামোও ঠিকঠাক। তার পরেও কেন এমন পরিস্থিতি ?

    জানা গেছে, তুফানগঞ্জ পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত তুফানগঞ্জ টাউন বিদ্যাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক মাত্র ছাত্র সবেধন নীলমণি। সেই ছাত্রও পরে অন্য স্কুলে চলে যায়। স্কুলে ছাত্র না থাকায় একা একা স্কুলে এসে বসে থাকেন এক শিক্ষিকা। তিনি অপর্ণা নন্দী। তিনি ওই স্কুলের ইনচার্জ। 

    কেন তাদের স্কুলে ছাত্র নেই ? সেই প্রশ্নের উত্তরে অপর্ণা জানান, ‘২০২৪ সালে এই স্কুলে যোগ দিই। সেবার দুজন পড়ুয়া ছিল। এবছর তা কমে একজনে গিয়ে দাঁড়ায়। একা একা পড়াশোনা করতে তার ভালো না লাগায় ওই পড়ুয়াকে অন্য স্কুলে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়েছে। আমিও অন্য স্কুলে চলে যেতে চাই। গোটা বিষয়টি ওপরমহলকে জানানো হয়েছে।’ 

    তুফানগঞ্জ-২ সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রিয়ংবদা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘সবকিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যেভাবে নির্দেশ দেবে সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে।’

    উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি এই প্রাথমিক স্কুলের পথচলা শুরু। এই স্কুল তৈরিতে শিক্ষানুরাগী ভানুপ্রকাশ দে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তুফানগঞ্জ টাউন গভর্নমেন্ট প্রাইমারি স্কুলে সকালে এই বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন চলত। পরবর্তীতে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্থায়ীভাবে স্কুল ভবন তৈরি করা হয়। সেসময় তুফানগঞ্জ পুরসভার সমস্ত ওয়ার্ড থেকেই কমবেশি ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তি হত। স্কুলের দারুণ সুনাম ছড়ানো শুরু করে। ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ভানুপ্রকাশ দে দিল্লি থেকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের পাশাপাশি এই স্কুলের সাফল্যের ঝুলিতে আরও অনেক পুরস্কার রয়েছে।

     ভানুপ্রকাশ ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন। সে সময় স্কুলে ৪০০-রও বেশি পড়ুয়া, তিনজন শিক্ষক। আজ তিনি রোগভোগে বাড়িতে শয্যাশায়ী। স্কুলের বর্তমান দশায় আরও কষ্ট পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের হাতে তৈরি করা স্কুলটিকে যে করেই হোক টিকিয়ে রাখতে হবে। সুস্থ থাকলে এই স্কুলটিকে বন্ধ হতে দিতাম না।’এই স্কুলের ছাত্র তথা আইনজীবী শুভময় সরকার ও চিকিৎসক সুদীপ রায় একই কথা বলেছেন। 

    তুফানগঞ্জ টাউন বিদ্যাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অরিন্দম রায়ের বক্তব্য, ‘২০০৮ সাল থেকে গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। শেষের কয়েক বছর একাই ছিলাম। ২০০৮ সালে  ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২৫ ছিল। তারপর থেকে প্রতিবছর কমতে কমতে এবছর শূন্য হয়েছে। বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষক ঘাটতি থাকার কারণে অভিভাবকরা ছাত্রভর্তি করাতে চাইতেন না।’
  • Link to this news (আজকাল)