• সময় আর পাঁচ দিন! ২৫ শতাংশ ডিএ নিয়ে কী নির্দেশ দেবে নবান্ন? তাকিয়ে সরকারি কর্মীরা
    আনন্দবাজার | ২২ জুন ২০২৫
  • চলতি সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমা। এই সময়ের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে কি না, সে দিকে তাকিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। ১৬ মে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ডিএ সংক্রান্ত মামলায় নির্দেশ দিয়েছিল, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ ডিএ বকেয়া রয়েছে, তার ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ২৭ জুন। ওই দিন রথযাত্রার কারণে রাজ্য সরকারের ছুটি, শুক্রবারের পর শনি এবং রবিবারও সরকারি ছুটি। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা মনে করছেন, চলতি সপ্তাহে ছুটি শুরু হওয়ার আগেই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ডিএ নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারে নবান্ন।

    ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ–র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে।

    কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে এর ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ২৭ জুনের মধ্যে মেটাতেই হবে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে মূল মামলাকারী কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমাদের আশা সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা রাজ্য সরকার পূরণ করবে। তবে যদি আগামী শুক্রবারের মধ্যে রাজ্য সরকার এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তা হলে আমরা আগামী শনিবার ই-মেল মারফত একটি চিঠি পাঠাব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। তাতে জানিয়ে দেওয়া হবে, যেহেতু রাজ্য সরকার আদালতের দেওয়া নির্দেশ মানেনি, তাই আগামী সাত দিনের মধ্যে ডিএ দেওয়া নিয়ে নবান্ন কোনও সিদ্ধান্ত না নিলে তারা আদালত অবমাননার মামলা করবে।’’

    রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের একাংশ মনে করছে, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা এখনও কর্মরত, বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ অর্থ তাঁদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, ওই বাড়তি টাকা সে ক্ষেত্রে কর্মচারীদের হাতে দিতে হবে না, সরকারের ঘরেই জমা থাকবে। আর যাঁরা অবসর নিয়েছেন, সেই সরকারি কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পেনশন অ্যাকাউন্টে বকেয়া টাকা দেওয়া হবে। এই নীতি কার্যকর হলে এই মুহূর্তে সরকারের আর্থিক বোঝা কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। তাতে যেমন আদালতের নির্দেশ পালন করা হবে, তেমনিই রাজ্য সরকারের উপর আর্থিক বোঝাও খানিকটা লাঘব হবে। গত সপ্তাহে বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠকশেষে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যসচিব, অর্থসচিব এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন বলেই নবান্ন সূত্রে খবর। সেই বৈঠকের পরেও বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ দেওয়া নিয়ে নবান্ন এখনও কোনও সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি।

    সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি কর্মচারী মহলের একাংশের মতে, নেতাজি সুভাষ পশ্চিমবঙ্গ ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় বিল নিয়ে বক্তৃতা করতে পারেন তিনি। সেই বক্তৃতাতেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দেওয়া নিয়ে ইঙ্গিত দিতে পারেন মমতা। তবে যেহেতু আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে এখনও রাজ্য সরকারের কাছে দিনকয়েক সময় রয়েছে, তাই আপাতত এই বিষয়ে একটু দেখেশুনে এগোতে চাইছে অর্থ দফতর।

    স্কুলশিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলছেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকার যত দ্রুত পদক্ষেপ করবে, তত সরকারেরই মঙ্গল। কারণ, সরকার নির্দেশ অমান্য করলে এর পর হয়তো সুপ্রিম কোর্ট ডিএ-র উপর সুদ দেওয়ার কথাও বলতে পারে। তাই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, কোনও জটিলতা বা টালবাহানা না করে বিভ্রান্তি এড়াতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন।”

    নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ডিএ সংক্রান্ত নির্দেশ সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করে যে আবেদন করার কথা ভেবেছিল রাজ্য, তা থেকে পিছিয়ে এসেছে। আর অর্থ দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বকেয়া ডিএ দিয়ে দেওয়ার জন্য আর্থিক সংস্থানের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। যত ক্ষণ না সেই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে, এ বিষয়ে সরকার পক্ষ কোনও বিবৃতি দেবে না। সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সময় এলে তা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। আপাতত রাজ্য সরকারের সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিকেই তাকিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)