দিনেদুপুরে ডাকাতি শিলিগুড়ি শহরে। নিরাপত্তারক্ষীকে বেঁধে রেখে কর্মীদের বন্দুক দেখিয়ে গয়না দোকান থেকে ‘সর্বস্ব’ লুট করল ডাকাতদল। রবিবার দুপুরে এই ঘটনায় শহরে শোরগোল। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দুপুরে হিলকার্ট রোডে একটি বড় গয়নার দোকানে হানা দিয়েছিল ছয়-সাত জনের একটি ডাকাতদল। দোকানের সামনে বাইকে রেখে তারা দোকানে ঢোকে। দোকানের নিরাপত্তারক্ষীদের বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে এক এক করে বিভিন্ন গয়না দেখতে থাকেন ছ’-সাত জন। প্রায় সমস্ত রকমের গয়না দেখেন, দরদাম করেন। তার পর আচমকা আগ্নেয়াস্ত্র বার করে সকলকে একটি জায়গায় জোড়ো হতে নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁদের। রক্ষীদের হাত-পা বেঁধে মারধর শুরু করে ডাকাতদলটি। দোকানের কর্মীদের বন্দুকের নলের সামনে রেখে শৌচাগারের পাশে কয়েক জনের হাত বেঁধে দেওয়া হয়। তার পর একে গয়না ব্যাগে ঢুকিয়ে দোকানের মূল দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। দোকানের কর্মচারীদের দাবি, সব মিলিয়ে প্রায় ২৭ কেজির সোনা এবং হিরের গয়না লুট হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ট্র্যাফিক পুলিশের তৎপরতায় ডাকাতদলের এক সদস্যকে হাতেনাতে ধরা গিয়েছে। অভিযুক্তকে শিলিগুড়ি থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর এক ব্যক্তিকে খালপাড়া আউটপোস্টের কাছ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই অভিযুক্তের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। ওই গয়নার দোকানে পৌঁছে গিয়েছে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি)। পরে খোদ কমিশনারও যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেয়র থেকে বিধায়ক। জানা গিয়েছে, দোকানের কর্মচারী-সহ নিরাপত্তারক্ষীদেরও মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে ডাকাতদল। ওই মোবাইলগুলির ‘লোকেশন ট্র্যাক’ করে ডাকাতদলের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে নাকা তল্লাশি।
রক্ষিত দেবনাথ নামে এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘দোকানে খদ্দের হিসাবে এসেছিল ছয় থেকে সাত জন। বন্দুক দেখিয়ে আমাদের হাত বেঁধে বাথরুমের সামনে রেখে দিয়েছিল। সব থেকে বেশি মার খেয়েছি আমি। তিন থেকে চার জন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।’’
ইতিমধ্যে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রতিদিন শহরে যে যে ঘটনা ঘটছে, তাতে অবশ্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে।’’ পাল্টা মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘নিরাপত্তা যথেষ্ট রয়েছে শহরে। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে অবশ্যই পুলিশ কড়া হাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শহরের চারপাশ দিয়ে একাধিক সীমান্ত রয়েছে। শুধু রাজ্যের পক্ষে সবটা দেখা সম্ভব নয়।’’ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর জানান, তদন্ত চলছে। এর চেয়ে বেশি কিছু এখন বলা সম্ভব নয়।