• হরিয়ানার গ্যাং সক্রিয়, এর পরে কোন ATM?
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি

    একের পর এক এটিএমে লুট। অপারেশন করে গা-ঢাকা দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। মার্চ থেকে তিনটি এমন ঘটনা উত্তরবঙ্গে। পুলিশের অনুমান, একটি লুটেরা চক্র আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে এই অপকর্ম করছে।

    হরিয়ানা থেকে এটিএম লুটের গ্যাং ঢুকেছে উত্তরবঙ্গে। রাজস্থান, বিহার-সহ অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দা এমন কয়েকজন সদস্য রয়েছে এই চক্রে। ২০-৪০ মিনিটে অপারেশন চালিয়ে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে।

    গত চার মাসে উত্তরবঙ্গের তিন জায়গায় এটিএম লুট হয়েছে এদের পরিকল্পনাতেই। দিন কয়েক আগে ময়নাগুড়ির বোলবাড়িতে এটিএম লুট করে দুষ্কৃতীরা। তার পরে একই কায়দায় শিলিগুড়ির চম্পাসারিতেও এটিএম ভেঙে টাকা লুট হয়। ময়নাগুড়ির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার দুষ্কৃতী পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। ধৃতদের বাড়ি হরিয়ানা, রাজস্থান এবং বিহারে।

    এটা থেকে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হরিয়ানা থেকে একটি দল এটিএম লুট করতে উত্তরবঙ্গে ঘাঁটি গেড়েছে। সেই দলটি নানা ভাগে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়।

    দু'টি জায়গাতেই লুট করার পরে বিহারের দিকে পালানোর কৌশল লক্ষ্য করা গিয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিকের মতে, মূল দলটি হরিয়ানার একটি গ্রাম থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গী হয়েছে পশ্চিম ভারত ও গো-বলয়ের কয়েকটি রাজ্যের একাধিক সদস্য।

    এদের প্রাথমিক কাজ, নিরাপত্তারক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টার চিহ্নিত করা। এর পরে দুষ্কৃতী দলের কয়েকজন সদস্য চিহ্নিত করা এটিএম কাউন্টারের ভালো করে রেকি করে। কোথায় কেমন পুলিশি পাহারা, কোন পথ দিয়ে দ্রুত চম্পট দেওয়া যাবে, কোন

    উত্তরবঙ্গে গত মার্চ থেকে তিন জায়গায় লুট সময়ে অভিযান চালানো হবে, কোন রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করে, এ সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করে তারা। এ সব তথ্যের ভিত্তিতে নিখুঁত ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে অপরাধীরা।

    এখনকার এটিএম কাউন্টারে দু'ধরনের ভল্ট দেখা যায়। এর মধ্যে এক ধরনের ভল্ট ভাঙা মুশকিল। কিন্তু অন্য এক ধরনের ভল্ট গ্যাস কাটার দিয়ে খুলে ফেলতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে।

    এ ধরনের ভল্ট কোন এটিএমে আছে, সেটাকে চিহ্নিত করা হয়। মেশিনের ভিতরে থাকা ট্রে বের করে টাকা নেওয়ার পরে এটিএম ভাঙার সামগ্রী গুটিয়ে ফেলা হয় চটপট। বাইরে দাঁড়ানো গাড়িতে নিমেষে উধাও হয়ে যায় এলাকা ছেড়ে।

    একের পর এক এটিএমে লুট হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন কাউন্টারে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তারক্ষী থাকলে লুটের সম্ভাবনা প্রায় নির্মূল হয়ে যায়। এ বিষয়ে অতীতে বহুবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের তরফে ব্যাঙ্ক-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অলঙ্কার বিপণির কর্ণধারদের সতর্ক করা হয়েছে।

    ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বাচাঁদ ঠাকুর বলেন, ‘ইতিমধ্যেই স্থানীয় স্তরে ব্যাঙ্ক ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বিভিন্ন এজেন্সিকে ডেকে বড় আকারে বৈঠক করে ফের একই কথা বলা হবে।’

    সূত্রের খবর, পুলিশের তরফে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে তাদের এটিএম কাউন্টারে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে বলা হবে।

    অ্যালার্ম সিস্টেম এবং সিসিটিভি নজরদারি জোরদার করতে হবে। ব্যাঙ্ক হোক কিংবা অন্য কোনও সংস্থা, লুট, চুরি-ডাকাতির ক্ষেত্রে সংস্থাগুলি বিমার টাকা পেয়ে যায়। শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায় অবস্থিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক বিনয় ঘোষের বক্তব্য, ‘সংস্থাগুলি বিমার টাকা পেয়ে গেলেও সেই অর্থ জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকেই আদায় করা হয়। ফলে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক।’

    ব্যাঙ্কগুলির সমালোচনায় মুখ খুলেছে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যাঙ্ক কর্মচারী সমিতির রাজ্য কমিটির সহ সম্পাদক লক্ষ্মী মাহাতো বলেন, ‘সব এটিএম কাউন্টারে উপযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা প্রয়োজন। আমরা বারবার এই দাবি জানিয়ে আসছি।’

    দার্জিলিং জেলা সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যালায়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক প্রশান্ত দাস বলেন, ‘শুধু নিরাপত্তারক্ষী রাখলে হবে না। রাত পাহারার জন্য প্রশিক্ষিত বন্দুকধারী রক্ষী রাখাও প্রয়োজন। নির্জন এলাকার বদলে জনবহুল এলাকাকে কাউন্টার তৈরির জন্য বেছে নেওয়া উচিত।’

    নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় শুধু ডাকাতি নয়, গ্রাহকরা প্রতারণার শিকারও হচ্ছেন। প্রবীণ নাগরিকরা টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে অনেক সময়ে প্রতারকরা এগিয়ে আসছে।

    বাবুপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জীব জোয়ারদারের বক্তব্য, ‘বছরখানেক আগে আমার বৃদ্ধ বাবা এটিএমে টাকা তুলতে যান। চোখের সমস্যা থাকায় এক তরুণ এগিয়ে এসে টাকা তুলে বাবার এটিএম কার্ডটি বদলে দেয়। পরে বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কয়েক হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)