• মাত্র ৪৫ দিন! কমিশন মুছে ফেলবে ভোটের ছবি-ফুটেজ, নয়া নির্দেশে বিতর্ক
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • এই সময়: প্রথমে গত বছরের লোকসভা, পরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোট— নির্বাচন ঘিরে স্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল। নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছিলেন বিরোধী দলের নেতারা। সদ্য সমাপ্ত দেশের পাঁচটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে নতুন একগুচ্ছ ব্যবস্থা চালু করে কমিশন।

    তাঁদের দাবি, এতে স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ দূর হবে। কিন্তু এরই মধ্যে কমিশনের এক সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছে ব্যাপক হইচই। কমিশন সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফলাফল ঘোষণার পর ৪৫ দিন পর্যন্ত ভোটপ্রক্রিয়ার (প্রচার, ভোটগ্রহণ, গণনা-সহ বিভিন্ন ধাপ) ছবি ও ভিডিয়ো ফুটেজ মজুত রাখা হবে।

    ওই সময়ের মধ্যে কোনও মামলা না হলে, সেই সব ফুটেজ নষ্ট করে দেওয়া হবে। কমিশনের যুক্তি, ভোটগ্রহণের সময়কার বুথের ছবি ও ভিডিও ফুটেজের ‘অপব্যবহার’ রুখতেই এমন পদক্ষেপ। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আগে এই ফুটেজ এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হতো।

    গত ৩০ মে সমস্ত নির্বাচনী আধিকারিকদের এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশটিই সম্প্রতি সামনে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কালে ভোটপ্রক্রিয়ার ছবি ও ভিডিয়োর অপব্যবহার শুরু হয়েছে।

    তাই নির্দিষ্ট সময়ের পরে ভোটগ্রহণের ছবি ও ফুটেজ নষ্ট করে দিতে হবে। তবে ওই সময়ের মধ্যে ভোটপ্রক্রিয়ার ছবি ও ভিডিয়ো ফুটেজ চেয়ে মামলা হলে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট বুথের ফুটেজ রেখে দেওয়া হবে। কমিশন যুক্তি, ভোটগ্রহণের ফুটেজ মজুত রাখা নিয়ে তেমন কোনও আইন নেই।

    এর আগে, ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশিকা জারি করেছিল, তাতে মনোনয়ন পর্বের আগের ফুটেজ তিন মাস, মনোনয়ন, প্রচার, বুথে বুথে ভোগ্রহণ এবং গণনার ছবি ও ভিডিয়ো ফুটেজ ছ’মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ নিয়ম ছিল এতদিন।

    কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ফলাফল প্রকাশের পরে ৪৫ দিন পর্যন্তই ফুটেজ মজুত থাকবে। ওই সময়ের মধ্যে কোনও মামলা হলে, সংশ্লিষ্ট বুথের বা গণনাকেন্দ্রের ফুটেজ রেখে দেওয়া হবে। ৪৫ দিন পরে হলে আর পাওয়া যাবে না।

    নির্বাচন করানোর ক্ষেত্রে ইভিএম যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখা থেকে, সেগুলি স্থানান্তরিত করা, ভোটগ্রহণ, ভোটগণনা, সবকিছুরই ভিডিয়োগ্রাফি হয়। তোলা হয় ছবিও। বুথের ভিতরে লাইভ ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকে, অর্থাৎ কোন বুথে কী চলছে, তা সরাসরি দেখা যায় কন্ট্রোল রুম থেকে।

    প্রচারে কোন প্রার্থী কত খরচ করছেন, আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তার জন্যও ভিডিয়োগ্রাফি চলে। সেই ফুটেজ সংরক্ষণ নিয়েই নয়া সিদ্ধান্তে উপনীত হলো কমিশন।

    এর আগে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনী বিধির ৯৩(২) (এ) ধারাও সংশোধন করে কমিশন। আগে নির্বাচন কমিশনের ফুটেজ চাইলে যে কেউ দেখতে পেতেন। সদ্য জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী এখন আর সাধারণ মানুষ ফুটেজ দেখতে পাবেন না।

    ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরোনো আইনে ওই সংশোধন ঘটায় কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ফুটেজ প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। আদালতের ওই নির্দেশের দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরোনো আইন পাল্টে দেওয়া হয়।

    কারণ, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে চণ্ডীগড় পুরসভা নির্বাচনে খোদ প্রিসাইডিং অফিসার নির্বাচনে কারচুপি করে বিজেপি-কে জিতিয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় সুপ্রিম কোর্টকে।

    কমিশনের নয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘যার কাছে জবাব চাওয়া হচ্ছে, সে নিজেই প্রমাণ নষ্ট করে দিচ্ছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ম্যাচ ফিক্সিং হচ্ছে। গণতন্ত্রে এই ধরনের ম্যাচ ফিক্সিং বিষের সমান।’

  • Link to this news (এই সময়)