• দিলীপ ঘোষকে নিয়ে ‘নড়বড়ে’ মেদিনীপুরের বিজেপি কর্মীরাই
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • এই সময়, খড়্গপুর: তিনিই এক সময় বিজেপি নেতা-কর্মীদের কাছে ছিলেন প্রাণবায়ু। আজ তাঁদের কাছে তিনিই নাকি গলার কাঁটা! তিনি হলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

    বিজেপির পুরনো নেতাকর্মীদের কথায়, ‘যে দিলীপদার জন্য বুক বেঁধে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে সাহস পেতাম। মিলেছিল সাফল্যও। সেই দিলীপদার জন্যই এখন বিজেপির অবস্থা নড়বড়ে।’ মেদিনীপুর সাংগঠনির জেলায় একটু কান পাতলেই এমনই চর্চা শোনা যাচ্ছে বিজেপির অন্দরে!

    বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন, ২০১৬ সাল থেকে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার ভার ছিল দিলীপ ঘোষের ওপরেই। যখন তিনি খড়্গপুর বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে এলেন। শুরু থেকেই ঝোড়ো ইনিংস খেলে গিয়েছেন তিনি।

    কাউকে তোয়াক্কা না করে দাদাগিরির পাল্টা দাদাগিরিও দেখিয়েছেন। ফলে বিজেপির নেতা-কর্মীদের মনে সাহসও বেড়ে যায় অনেকটা। শুধু মুখে নয়, কাজেও দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ঝোড়ো ইনিংসে ২০১৬ সালে ধরাশায়ী হয়েছিলেন খড়্গপুরের ১০ বারের বিধায়ক জ্ঞান সিং সোহন পালও।

    ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২০টি গ্রাম পঞ্চায়েতও দখল করেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে বিধানসভা আসন ছেড়ে মেদিনীপুর লোকসভা আসনে দাঁড়িয়েও জয়ী হন দিলীপ ঘোষ। ঠিক তারপর থেকেই ধীরে ধীরে পতনও শুরু। ২০১৯ সালে খড়্গপুর উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকে হারতে হয়।

    জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। যদিও ২০২১ সালে ফের খড়্গপুরে ফের বিজেপি প্রার্থী হীরণ চট্টোপাধ্যায় জয়ী হন। বিজেপির এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘২০১৯ সাল থেকে দিলীপ ঘোষের কারণেই সংগঠন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়।

    কারণ, পরপর সাফল্য আসায় তিনি সংগঠনকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাছের লোককে গুরুত্ব দিতে থাকেন। ফলে পুরনো কর্মীরা নীরবে দূরে সরে যান। ২০২১ সালে খড়্গপুরে হীরণকে প্রার্থীকে করেছিল দল। দিলীপ ঘোষের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রার্থী করেনি। তাই ওই সময় হীরণ জিতেছিল।’

    ঠিক এই জায়গা ধরেই পরবর্তীকালেও মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির রাশ এখনও দিলীপ ঘোষের হাতেই। কারণ, সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সমিত মন্ডল দিলীপ-ঘনিষ্ঠ। দলীয় নেতারাই জানাচ্ছেন, জেলার যে ২৬টি মন্ডল রয়েছে তারও প্রায় ২০টি ক্ষেত্রেই মন্ডল সভাপতি করা হয়েছে দিলীপ-ঘনিষ্ঠদেরই।

    অথচ, সম্প্রতি তাঁর বিয়েতে মুখ্যমন্ত্রীর উপহার পাঠানো, সস্ত্রীক দিঘায় জগন্নাথ মন্দির দর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ দল ভালোভাবে নেয়নি। তাই এটাও দেখা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এলেও সেখানে ডাক পাননি তিনি।

    দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘দল থেকে দিলীপদাকে নিয়ে লিখিত কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি। তবে মুখে বলে দেওয়া হয়েছে দলীয় কর্মসূচীতে তাঁকে যাতে না আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁর সঙ্গে দূরত্ব রেখেই চলা হয়।’

    দিলীপ ঘোষ আছেন স্বমহিমায়। তিরঙ্গা যাত্রা থেকে শুরু করে কর্মী বৈঠক – জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি করছেন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে। আবার একই জায়গায় দলীয় নির্দেশ মেনে একই কর্মসূচী পালন করছেন দলের অন্য নেতারা।

    ফলে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাচ্ছে বিজেপি। ফলে দল পড়ছে বিড়ম্বনাতেও। পাশাপাশি মন্ডল সভাপতিরা যেহেতু দিলীপ অনুগামী তাই দলের কর্মসূচীতেও পুরনো কর্মীদের ডাকা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

    দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘আমরা বুঝতে পারছি যে, সংগঠনের নেতারাই দিলীপদার কর্মসূচী করিয়ে দিচ্ছেন ঘুরপথে।’ অথচ, তাঁরা যখন কর্মসূচী করছেন আমাদের ডাকছেন না! অনভিজ্ঞ কর্মীদের হাতে চলে গিয়েছে দলের ক্ষমতা। যা কিন্তু দলকে ভরাডুবি করার জন্য যথেষ্ট। ফলে আমরা সকলেই অনেকটা দিশেহারা বলা যায়।

    কিন্তু এমন ঘটনা কেন মেনে নিচ্ছেন পুরনো কর্মীরা? কেনই বা দল পদক্ষেপ করছেন না? এব্যাপারে জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, ‘এখনও তো দলের জেলা কমিটি তৈরি হয়নি। জেলা কমিটি তৈরি হলে নিশ্চিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যা মিটবে।’

    দলের প্রবীণ নেতা গৌরীশঙ্কর অধিকারীর কথায়, ‘দলে নতুনদের সঙ্গে যদি পুরনোদের গুরুত্ব না দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু সাফল্য পাওয়া কঠিন। এটা বিভিন্ন কর্মসূচী দেখেও প্রমাণ মিলেছে।’

    আর দিলীপ ঘনিষ্ঠ জেলা সভাপতি সমিত মন্ডল বলেন, ‘দিলীপদা তো সামাজিক কর্মসূচী করছেন। তাছাড়া তিনি তো এখনও দলের বাইরে নন। তাঁর বিষয়ে যা সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন।’

    সমিতের কথায়, ‘পুরনো কর্মীদের কর্মসূচীতে ডাকা হচ্ছে না এটা ঠিক নয়। কর্মসূচী হলেই সকলেই ডাক পান। এখন দলের নীতিই হয়েছে পুরনোদের পাশাপাশি নতুন মুখও আনতে হবে।’

    বিজেপির বর্তমান অবস্থায় অবশ্য খুশি তৃণমূল। তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘জেলায় বিজেপির সংগঠন কখনও সেভাবে ছিল না। যে গুটিকয় নেতা-কর্মী এখনও রয়েছে তাঁরাও নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দলে বসে গিয়েছে। ফলে বিজেপি নিয়ে আমাদের ভাবনার কিছু নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)