• সারমেয়দের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে চায় পড়ুয়ারাও
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    প্রতিদিন স্কুল যাতায়াতের পথে একটি পথকুকুর প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীর পিছু নিত। কয়েকবার তো তাড়াও করেছিল। ভয়ে ছাত্রীর স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিছুদিন।

    পূর্ব মেদিনীপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলের ওই ঘটনায় সমাধান খুঁজে দিয়েছিলেন এক পশুপ্রেমী। তাঁর পরামর্শ মতো ছাত্রী ব্যাগে রাখত বিস্কুট। সেই বিস্কুট, কখনও তার টিফিনের আশ ওই কুকুরটিকে খেতে দিত।

    তারপর থেকে কুকুরটি ওই ছাত্রীর বন্ধু হয়ে যায়। ভয় বদলে যায় ভালোবাসায়। স্কুল পড়ুয়ায়ের পথকুকুরের কামড় থেকে বাঁচতে পশুপ্রেম জাগিয়ে তুলতে সরকারি স্কুলে পথকুকুরদের খাওয়ানোর প্রস্তাব দিল শিক্ষা দপ্তর।

    শিক্ষা দপ্তরের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বেশিরভাগ স্কুল। তমলুকের পদুমবসান হারাধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভাস্কররত পতি বলছেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই এটা করি। আমাদের স্কুলের মিড ডে মিলের উদ্বৃত্ত খাবার আমরা পথকুকুরদের খাইয়ে দিই। এটা সরকারি ভাবে সব স্কুলে চালু হলে ভালো হবে।’

    ঝাড়গ্রাম ননীবালা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মলিনা পাত্রের কথায়, ‘খুবই ভালো উদ্যোগ। প্রতিদিনই মিড ডে মিলের খাবার উদ্বৃত্ত হয়। পুরসভা সেই উদ্বৃত্ত খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। পথকুকুরদের ওই খাবার দেওয়া হলে ওরা ভালো ভাবে বাঁচতে পারবে।’

    মেদিনীপুর গ্রামীণের এলাহিয়া হাই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক নরসিংহ দাসের মতে, ‘পথকুকুররা পেট ভরে খেতে পায় না। মিড ডে মিলের উদ্বৃত্ত খাবার কুকুরদের দেওয়া হলে মন্দ কী। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এর ফলে পশুদের ভালোবাসতে শিখবে।’

    শিক্ষা দপ্তরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সতীশ সাউ। তিনি বলেন, ‘ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এই কাজে কোনও ভাবেই শিক্ষকদের নিযুক্ত করা যাবে না। এতে পঠনপাঠনের ক্ষতি হবে। এটাকে একটা আলাদা প্রকল্প হিসেবে শিক্ষা দপ্তর চালু করলে ভালো হয়।’

    পথ কুকুরদের খাওয়ানোর ব্যাপারে মানেকা গান্ধীর চিঠি পাঠানোর বিষয় নিয়ে ওয়াকিবহাল পশু-অধিকার সংগঠন বিধাননগর হেয় স্ট্রেস ফাউন্ডেশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা জুই চক্রবর্তী বলেন, ‘মানেকা গান্ধী এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন, এটা আমরা জানি। শিক্ষা দপ্তর ম্যাডামের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দেখে আমরা খুশি হয়েছি।’

    তবে পড়ুয়ারা এ ব্যাপারে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। পাঁশকুড়ার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া দেবব্রত মান্নার কথায়, ‘গতকাল বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা বিস্কুট দোকানে গিয়েছিলাম। একটা পথকুকুর আমার দিকে তাকিয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন খাবার চাইছে।

    আমি ওকে বিস্কুট খেতে দিয়েছিলাম। আমাদের বাড়িতেও একটি পোষ্য কুকুর আছে। আমি রোজ তাকে খেতে দিই। স্কুলে কুকুরদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা হলে খুব ভালো হয়। ওরাও রোজ পেটভরে খেতে পাবে।’

    পূর্বশ পূর্ব বাকুলদা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির সৌমিলি সামন্ত বলছে, ‘কুকুর আমার খুব পছন্দের। রোজ স্কুলে আসার সময়ে একটা কুকুরও আমার সঙ্গ নেয়। স্কুলে ওদের খেতে দেওয়া হলে ওরাও খুব আনন্দ পাবে। আমাদেরও বেশ মজা হবে।’

    আবার তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের দশম শ্রেণির কাব্যিক পালের কথায়, ‘স্কুল যাতায়াতের পথে অনেক কুকুর দেখতে পাই। ওদের অনেকেই রোজ পেট ভরে খেতে পায় না। স্কুলে রোজ মিড ডে মিলের রান্না উদ্বৃত্ত হয়। ওই খাবার অভুক্ত কুকুরদের দেওয়া হলে খুব ভালো হবে। ওরাও আমাদের বন্ধু হয়ে যাবে। বেপরোয়া হয়ে ঘেউ ঘেউ করবে না। আমরাও কেউ ভয় পাব না।’

  • Link to this news (এই সময়)