এ বার আর ‘ভুল’ নয়! বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে ‘ইমপিচমেন্ট’ বা অপসারণের প্রস্তাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন পেতে মোদী সরকারের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এ বার সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কথা বললেন।
আগামী ২১ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তৃণমূল-সহ বিরোধী শিবির ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বাদল অধিবেশনের আগেই সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার সেই দাবি খারিজ করেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রস্তাবে সমর্থন করবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে বার্তা দিয়েছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, রিজিজু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি টেলিফোনে কথা বলেছেন। সেখানেই এই আশ্বাস মিলেছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, মাস খানেক আগে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিভিন্ন দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা কাটাতে মন্ত্রী রিজিজুকেই ফোন করতে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রথমে মোদী সরকার নিজের পছন্দমতো ইরফান পাঠানকে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে রেখেছিল। তৃণমূলকে না-জানিয়ে বহরমপুরের সাংসদ পাঠানকে দলের প্রতিনিধি হিসেবে রাখায় মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তৃণমূল প্রতিনিধি দলে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরে রিজিজু মমতাকে ফোন করায় বরফ গলে। তৃণমূলের তরফে খোদ অভিষেক প্রতিনিধি দলে যোগ দেন। এ বার রিজিজু আর ‘ভুল’ না করে মমতাকেই ফোন করেন। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও রিজিজুর আলাদা কথা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বাদল অধিবেশনেই বর্তমানে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি থাকার সময়ে তাঁর বাড়ি থেকে বস্তা ভর্তি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য যথেষ্ট ভিত্তি আছে বলে সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটিও রায় দিয়েছে। রিজিজু কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গেও কথা বলেছেন। প্রায় সব বিরোধী দলই এর পক্ষে বলে সরকারের দাবি।
কেন এই বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তুলতে চাইছে মোদী সরকার? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সংসদে বিচারপতির অপসারণের প্রস্তাবে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। বিজেপির কাছে দুই-তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই শরিক দলগুলির সঙ্গে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে।
আইনত বিচারপতির অপসারণের প্রস্তাবে সরকারের ভূমিকা নেই। ১৯৬৮ সালের বিচারপতি তদন্ত আইন অনুযায়ী, সাংসদরাই এই প্রস্তাব আনতে পারেন। লোকসভায় ১০০ জন, রাজ্যসভায় ৫০ জন সাংসদের সই দরকার হয়। সেই কাগজপত্র তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দলের কাছে পাঠানো হবে বলে রিজিজু জানিয়ে রেখেছেন। লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের হাতে প্রস্তাব গ্রহণ বা খারিজের ক্ষমতা থাকে। প্রস্তাব গৃহীত হলে বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আইন মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই তিন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটির রিপোর্টও এসে গিয়েছে। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরের আগে সঞ্জীব খন্না সেই রিপোর্ট রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। ফলে নতুন করে তদন্ত কমিটির প্রয়োজন নেই। এ বিষয়েও সংসদে ঐকমত্য তৈরি করতে চাইছে মোদী সরকার। সংসদের দুই কক্ষে অপসারণের প্রস্তাব পাশ হলে রাষ্ট্রপতি বিচারপতিকে সরানোর নির্দেশিকা জারি করবেন।